More
    Homeরাজ্যঅকাল দুর্গোৎসবে মাতল আমতাবাসী

    অকাল দুর্গোৎসবে মাতল আমতাবাসী

    অভিজিৎ হাজরা#আমতা #হাওড়া : রাজ্যবাসী যখন বাগদেবীর আরাধনায় রত,সেই মুহূর্তে হাওড়া জেলার আমতা থানার কুরিট গ্ৰামবাসী মেতে উঠেছে ৪০ তম বার্ষিক দশভূজা কাত্যায়নী দুর্গাপূজায়।

    অকাল দুর্গোৎসব প্রাঙ্গনে বিশালাকৃতি সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ। পাশেই তারাময়ী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা গৌরচন্দ্র হাজরার সমাধি। বটগাছের তলায় মন্ত্রপূত ত্রিশূলের সামনে তিনি তন্ত্র- সাধনায় বসতেন। শনিবার সেখানেই প্রকান্ড হোমকুন্ডে চলছে হোমযজ্ঞ। মহানবমী পুজোর শেষপর্বে উচ্চারিত হচ্ছে বৈদিক মন্ত্র। একটি করে সমিধ ও ঘৃতাহুতি তে উজ্জ্বল পবিত্র হোম শিখার দীপ্তি।পোহাল নবমী নিশি। বেজেছে বিদায়ের সুর।রাত পোহালেই বিজয়া। বিসর্জনের বিষাদ। হাওড়ার আমতা কুরিট গ্ৰামের অকাল দুর্গোৎসব সাঙ্গ। তবু একটু আনন্দ নিহিত থাকছে কাত্যায়নী মেলাকে কেন্দ্র করে আর ও তিনদিন।”করোনা ” স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই মেলা চলছে।

    এদিন সকাল থেকেই মন্ডপে ভিড় উপচে পড়ছে।কুরিট সহ প্রতিবেশী বড়মহড়া,চাকপোতা,খোশালপুর,কোটালপাড়া,ছোটমহড়া,মল্লগ্ৰাম এমনকি হাওড়ার দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন। মায়ের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন।শস্যের প্রার্থনার সঙ্গে শান্তির আর্জি জানিয়েছেন মহালক্ষ্মী কাত্যায়নীর কাছে।বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হোমযজ্ঞ দেখতে ভক্তকূল আকূল হয়েছেন।বেলা তিনটা নাগাদ শুরু হয়েছে হোমযজ্ঞ, মূল মন্ডপ থেকে ৫০ ফুট দূরে প্রকান্ড বটবৃক্ষ তলায়। একপাশে সাজানো ফুলের বাগান।অন্যধারে তারামায়ের মন্দির।পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ডি-২ ক্যানেল। শস্যের প্রার্থনায় এলাকাবাসীর দুভিক্ষ ঘোচাতে,দুর্দশা দূর করতে দেবী কাত্যায়নীর আবাহন করা হয়েছিল গ্ৰামে। তারপর ওই খালের জলেই খরা কেটে চাষাবাদ শুরু হয়েছিল।শস্যহানির বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়েছিল কুরিট সহ পার্শ্ববর্তী অনেক গ্ৰাম। সেই থেকেই কাত্যায়নীর আরাধনায় নিবেদিত প্রাণ উত্তম কোলে, জয়দেব কোলে,

    প্রিয়তোষ কাঁড়ার ও সুকুমার বাবুরা।গ্ৰামবাসীদের ভক্তিভরে দেওয়া স্বেচ্ছাদানে তাঁরা এই পূজা করেন। পূজার ক’ দিন রাস্তার ধারে দু’চারজন মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে স্বেচ্ছাদান গ্ৰহণ করেন। খুশি করে যা দিয়ে যান দর্শনার্থীরা,তা নিয়েই সন্তুষ্ট তারাময়ী আশ্রমের সদস্যরা। কয়েক দিন পরেই অন্নপূর্ণা পূজা।সেই পূজায় অন্নকূট উৎসবে গ্ৰামবাসীরা নারায়ণ সেবার আয়োজন করে এই মঠেই।মঠের একাধারে রয়েছে কালী মন্দির ও। সেখানে কালীপূজা ও হয়। মূলত এই তিন মাতৃশক্তির পূজা হয় আশ্রমে।

    এই পূজা প্রসঙ্গে পূজার অন্যতম উদ্যোক্তা উত্তম কোলে বলেন,” তারাময়ী আশ্রম যেখানে প্রতিষ্ঠিত আজ থেকে ১৩০ বছর আগে এই স্থানটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। শিয়াল, কুকুর সহ বিষধর সাপের আস্তানা ছিল। বড়মহড়া গ্ৰামনিবাসী তারামা ভক্ত বিশ্বনাথ হাজরা এই জঙ্গলকে সাধনক্ষেত্র করে তারামা কে প্রতিষ্ঠা করে সাধনায় রত হন।জঙ্গল কেটে তৈরী করেন তারামা মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির। বটবৃক্ষের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসন তৈরী করে মন্ত্রপূত ত্রিশূলের সামনে তন্ত্র-সাধনায় বসতেন।পদ্মপাতায় মায়ের ভোগ খাওয়াতেন। তাঁর মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে ঐ স্থানটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।কেহ মারা গেলে সামান্য জঙ্গল কেটে দাহ করা হতো।কুরিট,বড়মহড়া,ছোটমহড়া,

    চাকপোতা,খোশালপুর,কোটালপাড়া,সহ বেশ কিছু গ্ৰাম কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। এই গ্ৰামগুলি পাশের ডি -২ ক্যানেলের জল সেচ কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করত। একটা সময়ে ক্যানেলের জল শুকিয়ে যায়। এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়ে।গ্ৰামগুলিতে হা হা কার পড়ে। এই অবস্থার সৃষ্টি হয় আজ থেকে ৪০ বছর আগে। এই সমস্যার সমাধানে র জন্য বড় বড় পুরোহিত,তান্ত্রিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।তারা পুরাণ ঘেঁটে কাত্যায়নী দশভূজা কাত্যায়নী দুর্গাপূজার আরাধনা করার বিধান দেন। আশ্রমটি শশ্নানে হওয়ায় ঐ স্থানে অসময়ে কাত্যায়নী দশভূজা দূর্গাপূজা করতে কোন পুরোহিত রাজী হয় নি। অবশেষে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী পূজা করতে রাজি হন, এবং কাত্যায়নী তন্ত্রমতে পূজা করেন। বর্তমানে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী প্রয়াত। প্রথমে এই পূজার সমস্ত ব্যয়ভার আমি (উত্তম কোলে) বহন করতাম। তারপর আমার সাধ্য না থাকায় বেশ কয়েক বৎসর পূজা বন্ধ থাকে।১৯৯৫ সালে শ্রীকান্ত কোলে, সুকুমার খাঁড়া,লক্ষীকান্ত কোলে গ্ৰামবাসীবৃন্দ পূজা করার জন্য এগিয়ে আসেন।

    অষ্ট পাল ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিমা নির্মাণ করেচলেছেন।পূজায় মন্ত্রপাঠ করেন মদন হালদার, ধনঞ্জয় চক্রবর্তী,ভুজঙ্গ চক্রবর্তী,অমিত চক্রবর্তী।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments