অনলাইন পড়াশোনার মাধ্যমে বহু পড়ুয়া যেমন এই দীর্ঘ লকডাউনে স্কুল চালিয়ে যেতে পেরেছে, তেমনি অনেকে আবার তা করতে গিয়ে অনেক খারাপ ব্যাপারেও প্রভাবিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল অনলাইন গেম। এমনিতেই বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অনলাইন গেম বাচ্চাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
অনলাইন গেমের বিপজ্জনক ফাঁদ! শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে একগুচ্ছ পরামর্শ কেন্দ্রের
Read more-এবার থেকে ট্রাফিক রুল ভঙ্গ ভাঙলেই ধরবে বিশেষ সফটওয়্যার, উদ্যোগী কলকাতা পুলিশ
তার উপরে প্রায় সারাদিন কম্পিউটারের সামনে থাকতে পারার সুযোগে এই গেম রীতিমতো আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে। অনেকের ক্ষতিও হয়ে যাচ্ছে! এই সমস্যার দিকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অনলাইন গেমের বিপদ এড়াতে অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশে একগুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। মাত্রাতিরিক্ত অনলাইন গেমের ফলে শিশুমনে যেমন চাপ পড়ে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বস্তুত, এই গেমগুলি খেলার সময় ছোটরা নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, সেগুলি সমাধান করতে পারলে তাদের খুবই আনন্দ হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ আরও বেশি করে সমাধান করতে থাকে তারা, একসময়ে এটাই নেশা হয়ে যায়। এটারই সুযোগ নেয় অনলাইন গেম তৈরির সংস্থাগুলি। তারা এমনভাবেই গেমস বানায়, যা শিশু মনে এমনই প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যার ফলে তারা গেমের পরবর্তী ধাপ কেনার জন্য বা খেলার জন্য আগ্রহী হয়। শুধু তাই নয়, পার্সোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন– সর্বত্রই মুড়িমুড়কির মতো বহুবিধ অনলাইন গেমের সন্ধান মেলে হাতেহাতে। এর ফলে ছোটরাও সহজেই এই গেমগুলির সন্ধান পায়, খেলে, আসক্ত হয়ে পড়ে। এখন প্যানডেমিকের কারণে স্কুলগুলি বন্ধ থাকায় শিশুদের মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে গেছে, সমস্যাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। এই অবস্থায় কী বলছে কেন্দ্রের গাইডলাইন, দেখে নিন একনজরে। বড়রা কী কী করবেন
- বাবা-মার সম্মতি ছাড়া কেউ যাতে ছোটরা কোনও অনলাইন গেম কিনতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাত্ আর্থিক লেনদেন যেন বাচ্চার হাতে না থাকে।
- কখনওই কোনও গেম অ্যাপের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করবেন না, তাহলে ক্রেডিট বা ডেবিড কার্ডের তথ্য তাতে থেকে যেতে পারে। ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন, যেটিই বাড়ার বাচ্চার কাছে থাকছে, তা থেকে যেন কিছু কেনা না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
- অজানা ওয়েবসাইট থেকে শিশুরা যাতে কোনও সফটওয়্যার বা গেম ডাউনলোড না করে, সেবিষয়ে তাদের সতর্ক করতে হবে।
- যে কোনও লিঙ্ক, ইমেজ এবং পপআপে ক্লিক করার সময় ছোটদের সতর্ক করতে হবে, ভাইরাসের বিষয়টি শেখাতে হবে।
- অচেনা কোনও সাইটে ওয়েবক্যামে বা প্রাইভেট মেসেজে বা অনলাইনে চ্যাট না করতে শেখাতে হবে ছোটদের। বিপদের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
- একটানা অনলাইন গেম খেললে কী কী ক্ষতি, তা বোঝাতে হবে বাচ্চাদের।
- অনলাইন গেম খেলার সময়ে যদি কোনও বিষয়ে সন্দেহ লাগে, তক্ষনাত্ সেই খেলা বন্ধ করে রিপোর্ট করতে হবে।
- ছোটদের প্রাইভেসির বিষয়টি বোঝাতে হবে। নিজের কোনও তথ্য যাতে সে কোথাও না দেয়, সতর্ক করতে হবে।
- ফায়ারওয়াল ব্যবহার করে ওয়েব ব্রাউজারকে কনফিগার করা প্রয়োজন। অ্যান্টিভাইরাস ও স্পাইওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যন্ত্রে বিভিন্ন সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে। বিশেষ করে ছোটরা যার মাধ্যমে মোবাইল গেম খেলবে, সেগুলিকে অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- বাড়ির বাচ্চাদের অনলাইন গেমের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। তারা যাতে এ নিয়ে বেশি টাকা খরচ না করে, সেটা বোঝাতে হবে। এছাড়াও তাদের জুয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাতে হবে।
- বাচ্চা যাতে বাড়ির সবার সামনেই কম্পিউটার ব্যবহার করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন
- অনলাইন ব্যবহার করার সময় বাচ্চা কোনও অসঙ্গত আচরণ করছে না তো।
- অনলাইনে মাত্রাতিরিক্ত সময় কাটাচ্ছে না তো।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে বাচ্চা যদি রেগে যায় বা বিরক্ত হয়, খেয়াল রাখতে হবে।
- বাড়িতে ইন্টারনেট গেটওয়ে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে বাচ্চারা কী ধরনের জিনিস দেখছে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী করবেন
- ছাত্রছাত্রীরা যদি খারাপ ফল করে বা তাদের মেলামেশায় কোনও পরিবর্তন হয়, তা দেখলে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের সতর্ক থাকতে হবে।
- শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সন্দেহজনক কোনও আচরণ দেখেন, তাহলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
- ওয়েব ব্রাউজার বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপদ ব্যবহারের জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
কোনও অসঙ্গতি বা বিপদে এই লিঙ্কগুলিতে যোগাযোগ করা যেতে পারে। https://cybercrime.gov.in/Webform/Helpline.aspx https://cybercrime.gov.in/Webform/Crime_NodalGrivanceList.aspx