গতকাল শ্যামবাজারের জমায়েতে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তোলেন এক দল মানুষ। শুধু স্লোগানেই থেমে থাকেনি একদল মানুষ তাঁরা অভিনেত্রীর গাড়ির উপরেও চড়াও হন। এমনকি গাড়ির দিকে জুতো ও বোতল ছুড়েও মারা হয়। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই জনরোষের মুখে পড়ে এলাকা ছাড়তে অভিনেত্রী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন টলিপাড়ার বেশ কিছু তারকা।
আগে থেকে স্থির ছিলোনা যে শ্যামবাজারের জমায়েতে ঋতুপর্ণা আসবেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঋষভ বসু বলেন, “হঠাৎই আমার কাছে খবর আসে, ঋতুদি এসেছেন। শ্যামবাজারের জমায়তে মোমবাতি জ্বালাতে চাইছেন তিনি। ঋতুদির সঙ্গে আমরা কয়েক জন কাজ করেছি। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, আমরা আছি। অতএব জায়গাটা নিরাপদ। আমাদের কারও অধিকার নেই যে ঋতুদিকে বলব, ‘তুমি এখানে এসো না’। তিনি অবশ্য তত ক্ষণে চলেও এসেছেন।”
তবে ঋতুপর্ণা গাড়ি থেকে নামার পরেই মানুষ বিক্ষভ দেখানো শুরু করেনি। বরং প্রথমে বেশ কয়েক জন আন্দোলনকারী তাঁর সঙ্গে নিজস্বীও তোলেন। তিনি বসে মোমবাতি জ্বালান। এর পরে কয়েক জন ব্যঙ্গ করে শঙ্খ বাজিয়ে ও উলু দিয়ে প্রতিবাদ জানান। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই উঠতে শুরু করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান।
ঘটনার আর এক প্রত্যক্ষদর্শী রাতাশ্রী দত্ত বলেন, “এক মহিলা কণ্ঠ প্রথমে এই ধ্বনি তোলে। তার পরে সকলে মিলে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তুলতে শুরু করেন। আমরা সকলকে অনুরোধ করতে থাকি এটা বন্ধ করার জন্য। ব্যক্তিগত অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু মানুষটার সঙ্গে এই আচরণ কাম্য নয়।”
ঋষভ বলেন, “ঘটনাটা আসলে এক দল মদ্যপ শুরু করে। ‘গো ব্যাক’ বলার সঙ্গে ‘চটিচাটা’ বলেও আক্রমণ করা হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। এমনকি শারীরিক ভাবেও হেনস্থা করার চেষ্টা করা হয়। মাত্র এক জন দেহরক্ষীকেই নিয়ে এসেছিলেন ঋতুদি। আমি, রাতাশ্রী এবং আরও কয়েক জন মিলে কোনও রকমে ওই জায়গা থেকে ঋতুদিকে বার করে আনার চেষ্টা করি। ঋতুদি গাড়িতে ওঠার পরে বোতল, জুতো ছুড়ে মারা হয়। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়।” তাঁর সংযোজন, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার ফ্যাসিবাদ, আমি সমর্থন করি না। এই জমায়েতে নানা স্তরের মানুষ ছিলেন। তাঁরা এখনও বিচার পাননি বলে ক্ষোভ রয়েছে। তাই সামনে এমন ক্ষমতাশীল এক মুখ দেখে এমন হঠকারী একটা ভুল করেছেন তাঁরা। এটা সাধারণ মানুষেরই হঠকারিতা।”
ঋষভ বলেছেন, “এটা তো মেয়েদের সম্মানের জন্য আন্দোলন। ইন্ডাস্ট্রিতে ঋতুদির কী অবদান, সে প্রসঙ্গ বাদ দিলাম। কিন্তু এক জন মহিলা বা এক জন মা এবং সর্বপরি এক জন মানুষের সঙ্গে এটা ঠিক হয়নি। নিজেদের মধ্যেও বদল আনা জরুরি।”
তবে এই বিক্ষোভের মুখেও অভিনেত্রী মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন বলে জানান রাতাশ্রী। অভিনেত্রীর কথায়, “আমরা কোনও রকমে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাই ঋতুদিকে। তবে একটা বিষয় দেখার মতো, ঋতুদি কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটাও খারাপ কথা বলেননি। মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন। আমাদের সঙ্গে এমন ঘটলে কী করতাম জানি না। ওই মানুষটা তো কারও ক্ষতি করেননি। মহিলাদের সম্মান চাওয়ার মিছিলে এক জন মহিলাকেই এমন হেনস্থা সত্যিই ভাবা যায় না।”