পেশ হল ধর্ষণ বিরোধী ‘অপরাজিতা’ বিল। রাজ্য বিধানসভায় আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক পেশ করলেন ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিল, ২০২৪)। সোমবারই দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেক বিধায়ককে এই বিলের খসড়। সেইমতো এদিন বিল পেশের আগে বেশ কিছু সংশোধনী-সহ প্রস্তাব জমা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তাঁর জমা দেওয়া সংশোধনীগুলি নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার শুরুতেই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিল, ২০২৪)-এ নয়া গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতা যদি কোমায় চলে যান, সেক্ষেত্রে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে।
আর এই অপরাজিতা বিল ২০২৪ নিয়ে শুভেন্দুর পাল্টা জবাবেই বক্তৃতা শুরু করলেন মমতা। তিনি বললেন, ‘‘আমি কারও জ্ঞান শুনবে না।’’ আজ ৩ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক দিন। ১৯৮১ সালে এই দিনে মেয়েদের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের নারী বৈষম্য বিরোধী কমিটি হয়। এই সময়ে মিহির গোস্বামী বলেন, লাইনে এসো। শুনে মমতা বললেন, ‘‘আমার লাইনে আসতে সময় লাগবে। আপনার লাইন বেলাইন হয়ে গেছে। ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট অপরাধের শাস্তি দেওয়ার কথা আমরা বলছি।’’ মমতার সংযোজন, ‘‘আমাদের পুলিশ তদন্ত করছিল। যত দিন তদন্ত কলকাতা পুলিশের হাতে ছিল, আমি কোনও দায়িত্ব পালন করিনি, বলতে পারবেন না। ১২ তারিখ নির্যাতিতার বাড়িতে যাই। যা যা তদন্তে উঠে এসেছিল, সেই সব তাঁর মা- বাবার কাছে পাঠানো হয়। আমি ওঁদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছি। রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তার আগেই সেই তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে। আমরা সিবিআইয়ের কাছে বিচার চাই।’’ অপরাজিতা বিলকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাথে তিনি বলেছিলেন, ওই বিলকে আগে আইনে পরিণত করা হোক. আমি রেজাল্ট দেখতে চাই। শুভেন্দুর ওই মন্তব্যেরও জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘বিরোধী দলনেতাকে বলুন বিলে রাজ্যপালকে বলুন সই করতে। তার পরেই দেখবেন রুলস হয়ে গিয়েছে। কামদুনিতে তিন সপ্তাহে চার্জশিট হয়েছিল। আপানারা বলেছেন ট্রেনে ধর্ষণ হয়েছে। ট্রেনটা কি আমাদের? ট্রেনের ভিতরের সুরক্ষার দায়িত্ব আরপিএফের। সেটা তাদের ব্যর্থতা।’’
শুভেন্দুর খবরের প্রিন্ট আউট প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘খবরের কাগজ তৈরি করাও হতে পারে। ওগুলো ফেক নিউজ়। আর আপনারা এই সব বলছেন, উন্নাওয়ের কথা বলবেন না। হাথরসের ঘটনায় বিচার পায়নি কেউ। এইগুলো ফলিয়ে বলার কথা নয়। ওই সমস্ত ঘটনা লজ্জার। যে বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, যে বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, তাকে ফুল-মালা দিয়ে সংবর্ধনা! ধর্ষণে উস্কানি নয়?” বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘‘আমাকে কটু কথা বললে আমার কিচ্ছু যায়-আসে না। আপনারা যা বলছেন বলুন। কিন্তু বাংলা মা-কে বদনাম করবেন না। আপনারা আমাকে যা যা বলছেন, তা যদি আমার দলের লোকেরা প্রধানমন্ত্রী আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, তা হলে কেমন লাগবে?’’ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তৃতা চলাকালীনই পদত্যাগের দাবি তুলছিলেন বিরোধীরা। মমতা তাদের হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘‘আগে নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ চাই। তার পরে বাকি কথা।’’ অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ‘‘এই বিল একটা ইতিহাস! প্রধানমন্ত্রী পারেননি। আমরা পারলাম। করে দেখালাম। প্রধানমন্ত্রী দেশের লজ্জা! উনি মেয়েদের রক্ষা করতে পারেননি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।”