‘একসময় বলিউডকে পথ দেখিয়েছিল বাংলা সিনেমা, অথচ আজ আইফার মঞ্চে জায়গা পেল না সেই বাংলাই!’ প্রশ্ন ভাবাল টোটা রায় চৌধুরীকে। কোথায় রয়ে গিয়েছে ঘাটতি? দুবাইয়ে এক বাঙালি মহিলা সাংবাদিকের প্রশ্নে ঘুম উড়ল অভিনেতার। সম্প্রতি আইফা অ্যাওয়ার্ডস-এর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা। ইতিমধ্যেই দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই জমি শক্ত করেছেন তিনি। ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য বলিউডের তাবড় অভিনেতাদের সঙ্গে মনোনীতও হয়েছিলেন টোটা। পুরস্কার না পেলেও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অভিনেতা। আইফাতে প্রবেশ করার আগে প্রেস কর্নারে এক মহিলা সাংবাদিক টোটাকে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, ‘আইফা তো দক্ষিণের চার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অ্যাওয়ার্ড ফাংশন করছে। একসময় এই হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিকে বাঙালিরাই পথ দেখিয়েছিল। এখন হিন্দি কোন সুদূরে এগিয়ে গিয়েছে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সদস্য হয়ে আফসোস হয় না, যে কেন IIFA বাংলা ছবি নিয়ে কোনও অ্যাওয়ার্ড শো করে না?’ এই প্রসঙ্গে টোটা লেখেন, ‘দেখলাম প্রায় পঞ্চাশ জন সাংবাদিক, যে যা করছিলেন সেটা থামিয়ে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। হেডলাইটে হরিণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিলাম- “তাঁদের অগ্রগতি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সবাই মিলে প্রচেষ্টা করব যাতে হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করা যায়।” উত্তর শুনে কন্যা তখন মিটিমিটি হাসছেন। ভাবখানা এই যে, গুগলি দিলাম বটে তবে মন্দ খেললে না। অবশ্য রাতে ফিরে ডিনারের পর পায়চারি করতে করতে প্রশ্নটা ভাবাল। সত্যিই তো, একটা সময় আমরাই পথপ্রদর্শক ছিলাম। রায়, সেন, ঘটকদের কথা ছেড়েই দিলাম। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘নিশিপদ্ম’ (অমর প্রেম) বা ‘অগ্রদূত’-এর ‘ছদ্মবেশী’র (চুপকে চুপকে ) মতো অনেক বাংলা ছবির হিন্দি রিমেক এক সময়ে ভারত কাঁপিয়ে ব্যবসা করেছে। এক দশক আগেও ঋতুপর্ণ ঘোষের, ছবিগুলো বহু ভাষাভাষীর দর্শক দেখতেন এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। কোথায় আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতি হল বা কী করলে পূর্বস্থান পুনর্দখল করতে পারি, তা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনার আশু প্রয়োজন। কবে ঘি খেয়েছি বা ঘি-চপচপে পোলাও বিতরণ করেছি, সেটা বারংবার বমন করে বাকিদের বিরক্তির ও করুণার পাত্র হয়ে এক ইঞ্চিও অগ্রগতি হবে না।’ সঙ্গে তিনি আরও লেখেন, ‘আমার মনে হয় গত ১০-১২ বছরে আমরা যেন চিন্তাধারায়, মানসিকতায় ও কর্মে খুবই ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ হয়ে উঠেছি। অন্যকে ছোট করে নিজেকে বড় প্রমাণিত করার দৌড়ে এটা ভুলে গিয়েছি যে, নিজেকে বৃহৎ করেও কিন্তু অন্যকে খর্ব করা যায়। অবশ্য দ্বিতীয়টি অপেক্ষাকৃত অনেকটাই কঠিন। সেটা করতে গেলে প্রথমেই ঈর্ষা ত্যাগ করে স্বীকার করে নিতে হয় যে প্রতিযোগীর কাজ তুলনায় উচ্চমানের। তারপরে উন্নতিসাধনে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা। সেগুলো করার প্রাথমিক শর্ত হল- সত্যের সম্মুখীন হওয়ার বাত্যার সাহস ও ব্যাপ্ত হৃদয়। আমাদের পূর্বসূরিদের হয়তো তাঁদের কিছু উত্তরসূরিদের মত জার্মান গাড়ি, সুইস ঘড়ি, ফ্রেঞ্চ পারফিউম, ইটালিয়ান স্যুট, গ্রীক ভেকেশন, বহুতলে দক্ষিণখোলা ছিল না কিন্তু মনখোলা, প্রাণখোলা ছিল বলে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করতেন, আর তাই আমরা তাঁদের মনেপ্রাণে স্থান দিয়েছি।’