নতুন বছর শুরুর মুখেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল কালিম্পং শহরে। গানের অনুষ্ঠান দেখতে এসে পদপিষ্ঠ হয়ে মারা গেলেন ২জন মহিলা। আরও ৫জন গুরুতর জখম হয়ে কার্যত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার দায়ে এখন পাহাড়ের রাজনীতিতে কোনঠাসা দশা হয়েছে জিটিএ কর্তৃপক্ষের। আমজনতার ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বিনয় তামাং ও অনিত থাপা। পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। রবি রাতের এই দুর্ঘটনার জেরে কালিম্পং শহর এদিন সকাল থেকেই থমথমে হয়ে রয়েছে। মৃতদের পরিবারের তরফে জিটিএ’র কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। যদিও অনুষ্ঠানের আয়োজন জিটিএ নয় এই কারন দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছে জিটিএ কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আর্জি জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, কালিম্পংয়ের মেলাটার এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল রবিবার সন্ধেবেলায়। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন জনপ্রিয় নেপালি গায়ক আশিস রানা। দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষজনের মধ্যে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই আশিস রানার অনুষ্ঠান শুনে মেলাটার এলাকায় ভিড় জমিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। এরপর আশিস রানা গান শুরু করতেই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। এমনিতেই পাহাড়ে সংকীর্ণ এলাকার মধ্যে মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান। তার উপর ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকায় অনুষ্ঠানের গেটের কাছে চাপ বাড়ে। সেই চাপ ধীরে ধীরে মঞ্চের কাছ পর্যন্ত চলে আসে। এরপরই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। জনতার হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে গিয়ে কয়েকজন পদপিষ্ট হন। এই বিষয়ে কালিম্পং পুরসভার চেয়ারম্যান রবি প্রধান বলেন, ‘টিকিট কাউন্টারে প্রবল ভিড় ছিল। অনুষ্ঠানের জায়গায় যাওয়ার জন্য উত্সুক ছিলেন তাঁরা। টিকিট কাউন্টারের পরেই একটি সিঁড়ি ছিল। সেখান দিয়ে মাঠে ঢুকতে হয়। গেট খোলার পরেই অসংখ্য মানুষ মাঠে ঢোকার জন্য তাড়াহুড়ো করতে থাকেন। তার জেরে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। অনেকেই সিঁড়ি থেকে পড়ে যান।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পদপিষ্ট হয়ে এখনও পর্যন্ত যে ২জন মারা গিয়েছেন তাঁরা হলেন অনিতা ছেত্রী(৪০) ও বনিতা গুরুঙ(৪৬)। দু’জনেই কালিম্পঙের চন্দ্রালোকে থাকতেন। গুরুতর আহত হয়েছেন পরিমা রাই(১৮), প্রতীক্ষা ছেত্রী(১৪), মারসাং সুব্বা(২০) ও অনিতা সুব্বা(৩১)। এছাড়াও কয়েকজনের সামান্য চোট-আঘাত লেগেছে। কালিম্পঙের পুলিশ সুপার হরিকৃষ্ণ রাই জানিয়েছেন, ‘আহত ছ’জনের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি মেলার মাঠের গানের অনুষ্ঠানে ঢোকার সময় টিকিট কাউন্টারের কাছে সেই ঘটনাটি ঘটেছে। কালিম্পং স্টেডিয়ামের মেলার মাঠে প্রায় ২০,০০০ মানুষ জমায়েত করেছিলেন। এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মহকুমা শাসকের অনুমতির প্রয়োজন হয়। রবিবারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য উদ্যোক্তারা অনুমতি নিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাছাড়া কোভিড আবহে কীভাবে এত মানুষের জমায়েত করা হল সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা ইতিমধ্যেই রুজু করা হয়েছে। মৃত এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ এবং সবরকমের সাহায্য করা হচ্ছে।’