প্রতি ১৪৪ বছরে একবার পালিত হয় মহাকুম্ভ। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সময়ের অবসান ঘটিয়ে এ বছরই এল সেই সন্ধিক্ষণ। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলতি মাসের ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত চলবে এই মেলা। ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে ত্রিবেণী সঙ্গমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুম্ভমেলা।
তবে, এই পুণ্য অর্জন করে অনেকেই ফিরতে পারলেন না নিজের বাসভূমিতে।ঘটল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। স্বাধীন ভারতের প্রথম কুম্ভই কেড়ে নিয়েছিল প্রায় ৮০০ লোকের প্রাণ। সেই করুণ ইতিহাস ২০২৫ সালেও যেন ভেসে উঠল চোখের সামনে। চলতি বছরের প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে, পদপিষ্টের ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে মৌনী অমাবস্যার দিন ‘অমৃত স্নানে’র সময়। যদিও ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন যোগী সরকার।
এমন মর্মান্তিক ঘটনায় হাহাকার-চিৎকার-কান্নার শব্দ ভেসে আসতেই যেন শিউরে ওঠে গা। তাই এ বার এই বিষয়কে একেবারেই এড়িয়ে যেতে পারলেন না অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। বিনোদন জগতের অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক তরজায় বরাবরই তিনি স্পষ্টবাদী। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও বহুবার মুখ খুলেছেন তিনি। তবে, এ বার অভিনেত্রীর নজর কেড়েছে কুম্ভ মেলার এই দুর্বিষহ ঘটনা। তাঁর মতে, এই সমাজের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সরব হলেন অভিনেত্রী। সেই সঙ্গে এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাকে তিনি মিলিয়েছেন ভিকি কৌশল অভিনীত ছবি ‘ছাবা’র সঙ্গে। তীব্র কটাক্ষ করেছেন ইতিহাস নির্ভর এই ছবিকে।
ছবির কিছু অংশকে মহাকুম্ভের এই মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে স্বরা লিখলেন, ‘সমাজ ৫০০ বছর আগে হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া ঘটনার আংশিক কাল্পনিক প্রকাশ দেখে বেশি ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে পদপিষ্ট হয়ে যাওয়া এবং অব্যবস্থাপনার ফলে যে ভয়াবহ মৃত্যু হয়েছে, তাতে নীরব মানুষ। দেখে মনে হচ্ছে, এই সমাজের মন ও আত্মার মৃত্যু ঘটেছে।’ স্বরার এই টুইট ঘিরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নানা বাকবিতণ্ডা।
‘ছাবা’, যা মারাঠা রাজা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। যাঁর চরিত্রে দর্শক মহলের মন জিতেছেন ভিকি। এটি শিবাজি সাওয়ান্তের মারাঠি উপন্যাস ‘ছাবা’র অবলম্বনে তৈরি।
বর্তমানে বক্স অফিসে চলছে ‘ছাবা’ ঝড়। ভিকি ওরফে সম্ভাজির ওপর মোঘল সম্রাটের অত্যাচার দেখে প্রেক্ষাগৃহে বসেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছেন দর্শক। ছবিতে একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে, সম্ভাজিকে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা বলেন ঔরঙ্গজেব। আর তা অস্বীকার করায় নির্মম অত্যাচার হয় সম্ভাজির ওপর। দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। এই দৃশ্য বড় পর্দায় দেখা মাত্রই ফুঁসছেন দর্শকদের একাংশ।
অন্যদিকে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত লোকের মৃত্যু দেখে বলেছিলেন, “মহাকুম্ভ নাকি মৃত্যু কুম্ভ”। এই নিয়েও তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। সম্প্রতি, এই কারণে তাঁকেও তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেও উঠেছে সমালোচনার ঝড়।