‘নহি যন্ত্র নহি যন্ত্র’, ‘দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান’, এই সংলাপ গুলি অপরিচিত নয় কারোর কাছেই। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিটির কথা বললেই প্রথম যে দৃশ্যের কথা মনে পরে তা হল ‘রাজসভা’। যেই রাজসভায় থাকতো বিদূষক এবং মন্ত্রীরা। রাজ কর্মচারী হলেও এক ব্যক্তি সারাক্ষণই থাকতো তার নিজের মহলে। যিনি মনে করতেন, এই দুনিয়াকে ‘আমি একা’। তিনি হলেন এক গবেষক। যার আবিষ্কার বার বার মুগ্ধ করতো রাজাকে। যিনি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ‘মগজ ধোলাই’ যন্ত্র। সেই অদ্ভুত কিম্ভুতকিমাকার যন্ত্র এবার দেখা যাবে চোখের সামনেই। টালা বারোয়ারি মণ্ডপ প্রাঙ্গন এবার সেজে উঠবে ‘হীরক রাজার দেশে’র সাজে।
নতুন করে সেজে ওঠা এই হীরক রাজার দেশের প্রাঙ্গনে সঙ্গে থাকবে হীরক রাজার দেশের আরও নানা চাকচিক্য! পুজো দেখতে হলে দর্শককে প্রবেশ করতে হবে যন্তরমন্তর ঘরে। তার পর হতেই পারে চোখ ধাঁধানোর মগজধোলাই! আট থেকে আশি পর্যন্ত সকল বয়সের দর্শকের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় সত্যজিতের এই সিনেমাই এবার সাজিয়ে তুলবে টালা বারোয়ারির মণ্ডপ। টালা বারোয়ারির এই বারের পুজোর বিষয়ের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে আয়োজকরা জানিয়েছেন, টালা বারোয়ারির পুজো যে স্থানে হয়, তার খুব কাছেই শুটিং হয়েছিল ‘অপুর সংসার’ ছবিটির। আবার কানু বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ পথের পাঁচালির হরিহর ছিলেন এই এলাকার বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে টালা বারোয়ারির পুজোও শুরু হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের জন্মবর্ষ অর্থাৎ ১৯২১ সালে। চলতি বছর সত্যজিৎ রায়ের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। অন্যদিকে টালা বারোয়ারির পুজোও পা দিল ১০৪তম বছরে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন এই বারের পুজোর বিষয় হীরক রাজার দেশকে কেন্দ্র করে হলেও, থিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হীরে মানিক জ্বলে’। নামটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত রচনা হলেও। এই ক্ষেত্রে নামটির মধ্যে থাকা হীরে বলতে বোঝানো হয়েছে, মানিকবাবু অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়কে। অন্যদিকে আয়োজকরা এও জানায়, অশিক্ষার নিধনই এবারের পুজোর মূলমন্ত্র। সারা দেশ জুড়ে যেভাবে মানুষ শোষিত হয়ে চলেছে, তার মূল কারণ অশিক্ষা। আর সেই অশিক্ষা দূর করতেই প্রয়োজন একজন উদয়ন পণ্ডিতের। টালা বারোয়ারির সমগ্র মণ্ডপসজ্জা ও মূলভাবনা মনে করাবে আমাদের অনেকের প্রিয় সেই উদয়ন পণ্ডিতের কথাও!