মেদিনীপুর,বর্ধমানের পর উত্তর চব্বিশ পরগণার সভায় ভিড় হয়েছিল ভালোই। গোপালনগরের সভায় হাই ভোল্টেজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা কেমন হবে, তাই নিয়ে জল্পনা ছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সেটাই ফিরে পেতে এবার আসরে নেমেছে তৃণমূল। বুধবার বনগাঁর গোপালনগরে জনসভা থেকে ফের মতুয়াদের মন পেতে তাঁদের একের পর এক দাবিকে মান্যতা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম দাবি ছিল মতুয়াদের উন্নয়ন পর্ষদের। সে ব্যাপারে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাউড়ি, নমঃশূদ্রের পাশাপাশি মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নাম দেওয়া হলে আমি কাজ শুরু করে দিতে পারব। এটা আপনাদের প্রথম দাবি ছিল।’
এর পরই দ্বিতীয় দাবিতে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। মতুয়াদের বহুদিনের দাবি, শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি ঘোষণা করুক রাজ্য সরকার। মতুয়াদের মন পেতে এবার সেই দাবিও রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি জানান, পঞ্চানন বর্মা, বীরসা মুন্ডার মতো হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতেও রাজ্য সরকার ছুটির দিন ঘোষণা করবে। প্রতি বছর মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন পালিত হয়। তবে বছরে কোন দিন এই তিথি পড়ছে তা নতুন বছর শুরুর ৬ মাস আগে যখন ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তখন জানিয়ে দিতে হবে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মতুয়াদের তৃতীয় দাবি ছিল হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২০১৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পর আর কাজ সেভাবে এগোয়নি বলে অভিযোগ ছিল মতুয়াদের। কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচিল তৈরির কিছু ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘এখানে আমরা কলেজ করে দিয়েছি, সেটা চালু হয়ে গিয়েছে। আর হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা তা সম্পূর্ণ করে দেব।’ এ কথা জানিয়ে গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘আমরা কথা দিলে কথা রাখি। এটা বিজেপি নয় যে ভোটের সময় বড় বড় কথা বলে আর পরে পালিয়ে যায়।’
পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যপুস্তকে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী, তাঁদের বাণী যাতে থাকে এমন দাবি করেছিলেন মতুয়ারা। সেই দাবি ইতিমধ্যে রাখা হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ইতিমধ্যে রিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী ইতিহাস বইতে সংযোজন করা হয়েছে। যদি আরও কিছু সংযোজন করার থাকে তবে শিক্ষা দফতরে তা জানাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে, এসসি, এসটি, ওবিসি সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়ার সরলীকরণের দাবি ছিল মতুয়াদের। সেটাও সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়ে এদিন মমতা বলেন, ‘বাড়িতে কারও যদি জাতি শংসাপত্র থাকে তবে ১০ দিনের মধ্যে নতুন আবেদনকারী তাঁর শংসাপত্র পেতে পারে।’ সভার প্রথমদিকে একের পর এক ঘোষণার মাধ্যমে এভাবেই এদিন মতুয়াদের জয় করার চেষ্টা করেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।