ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার ফের রাজ্যে আসছে কমিশনের দল। এভার তাঁদের গন্তব্য মালদা-মুর্শিদাবাদ। এই দলে থাকছেন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আতিফ রশিদ। এর আগে যাদবপুরে গিয়ে তাঁকে বিক্ষোভ এবং নিগ্রহের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২ জুন ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে পুলিশ, প্রশাসনকে কার্যত তুলোধনা করে ছাড়ে কলকাতা হাইকোর্ট। এর আঘে সরকারের তরফ থেকে বারংবার দাবি করা হয় যে বর্তমানে রাজ্যে পরিস্থিতি শান্ত। বিক্ষিপ্ত ঘটনা যা ঘটেছিল তা নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়েছিল। তবে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে কার্যত মেনে নেওয়া হয়েছে যে, ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার মানুষজন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
আদালত তার পর্যবেক্ষেণ জানিয়েছে, মামলাকারীদের বয়ান পড়েই বোঝা যাচ্ছে, ভোটপর্ব মেটার পর থেকেই রাজ্যে হিংসা চলছে। কিন্তু সরকার প্রথম থেকেই ভুল পথে হাঁটছে। তারা প্রথম থেকেই গোটা বিষয়টিকে অস্বীকার করে এসেছে। ভোট পরবর্তী হিংসায় বহু মানুষ খুন হয়েছেন। অনেকের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং আক্রান্তদের অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন। এমনকী নাবালিকাদেরও রেয়াত করা হয়নি। তাদের অকথ্য যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। বহু মানুষকে তাঁদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি হারাতে হয়েছে। তাঁরা বাধ্য হয়েছেন বাড়ি ছেড়ে পালাতে। এমনকী, এঁদের অনেকেই বর্তমানে ভিনরাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকার সেই বাতাবরণ তৈরি করতে পারেনি, যার উপর ভরসা করে ঘরছাড়ারা ঘরে ফিরতে পারেন। নিজেদের কাজকর্ম, রুজিরুটি শুরু করতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ আক্রান্তদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু তাঁদের বিরুদ্ধেই পাল্টা মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের তরফে গোটা বিষয়টিকেই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনাধীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আদালতের মনে হয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসার যে কটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেগুলিরও তদন্ত দায়সারাভাবে করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাঁরা এই ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকী, বেশ কয়েকটি ঘটনা শুনে মনে হয়েছে, সেগুলিতে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হওয়া উচিত ছিল। অথচ, আক্রান্তদের অভিযোগটাও নথিভুক্ত করা হয়নি। অধিকাংশ মামলাতেই অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন।