রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সকল বেকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিরাট সুখবর। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এবারে রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে বেকারত্ব দূরীকরণ অভিযান। এবার বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে হবে চাকরি আর কেউ থাকবে না বেকার। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এমনটাই আশ্বাস দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার বেকার চাকরিপ্রার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সরকার স্বীকৃত সংস্থায় রাজ্য সরকার চাকরির সুযোগ করে দেবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য জুড়ে লক্ষ লক্ষ শূন্যপদে রাজ্য সরকার কর্মী নিয়োগ করবে। সুতরাং আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী একজন বেকার চাকরিপ্রার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সামনে বড় সুযোগ। এই প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করে প্রশিক্ষণ নিলে আপনার চাকরি একেবারে নিশ্চিত।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সারা রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। আগে এই দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের মাধ্যমে কেবলমাত্র রাজ্যবাসীদের বিভিন্ন ধরনের সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হতো এবং সেইসঙ্গে বিভিন্ন অভিযোগ শুনে সেই সমস্যার সমাধানও করা হতো। তবে এবারে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শিল্পক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ শূন্যপদে এই দুয়ারে সরকার ক্যাম্প থেকেই কর্মী নিয়োগ করা হবে। এবার থেকে আর আপনাকে চাকরির জন্য এদিক সেদিক ছুটে বেড়াতে হবে না রাজ্য সরকার তার দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে আপনার দোড়গোড়ায় চাকরির খবর নিয়ে পৌছে যাবে।
ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের ও বিদেশের বেশ কয়েকটি বড়ো বড়ো নামকরা শিল্প সংস্থা রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই শিল্প সংস্থা গুলিতেই কাজের জন্যে লক্ষ লক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। আর এই বিপুল সংখ্যক কর্মীর চাহিদা পূরণ করতেই এই সব দেশি বিদেশি নামকরা শিল্প সংস্থা গুলি এবার থেকে চাকরির খোঁজ নিয়ে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের সামনে হাজির হবেন। এবং সেখান থেকেই তারা চাকরিপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে যে চাকরিপ্রার্থী যে ধরনের কাজের জন্য যোগ্য তাকে সেই ধরনের কাজের নিয়োগ পত্র সরাসরি হাতে তুলে দেবেন।
এই প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যের কারিগরী শিক্ষা ও উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন যে প্রথম পর্যায়ে এই কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রাজ্য জুড়ে ১০,০০০ বেকার যুবক যুবতীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হবে। তারপর ধীরে ধীরে এই নিয়োগের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চালু হওয়া এই বিশেষ প্রকল্পের নাম হল “আমার কর্মদিশা”। চাকরিপ্রার্থীরা google play store থেকে এই “আমার কর্মদিশা” অ্যাপটি ইন্সটল করে সেখানে নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে Login করে খুব সহজেই বাড়িতে বসেই আবেদন করতে পারবেন। এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদন করা যাবে কোনো রকম আবেদন মূল্য দিতে হবে না। চলুন এই প্রকল্পের সমন্ধে বিস্তারিত ভাবে যেনে নেওয়া যাক।
• প্রশিক্ষণের বিষয় :-
এই “আমার কর্মদিশা” নামক কর্মমুখী প্রকল্পের আওতায় বেকার যুবক যুবতীরা যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে সেগুলি হল –
১) Beauty and Wellness
২) Capital Goods
৩) Council owned courses
৪) Agriculture
৫) Automobile
৬) Food processing
৭) Furniture and fittings
৮) Gems and Jewellery
৯) Green Jobs
১০)Construction
১১) Domestic worker
১২) Electronics and hardware
১৩) Hydrocarbons
১৪) Apparel, made-ups and home furnishing
১৫) Aerospace and Aviation
১৬) Handcrafts and Carpets
১৭) Healthcare
১৮) Banking, Financial services and Insurance
• শিক্ষাগত যোগ্যতা :-
প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে করতে হলে যে যে যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলি হল –
এক্ষেত্রে কোনো রকম নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়নি। যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার বেকার যুবক যুবতীরা এখানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে।
• আবেদন পদ্ধতি :-
” আমার কর্মদিশা” প্রকল্পে আবেদন করতে হলে চাকরিপ্রার্থীকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
১) প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ কারিগরি শিক্ষা ও উন্নয়ন দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://www.pbssd.gov.in এ প্রবেশ করতে হবে।
২) এরপর সেখান থেকে আমার কর্মদিশা অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩) এরপর নিজের বৈধ মোবাইল নাম্বার ও নিজের ডেট অফ বার্থ দিয়ে Login করতে হবে।
৪) এরপর মোবাইলে একটি OTP আসবে সেটিকে Confirm করতে হবে।
৫) এরপর একটি নতুন পেজ খুলবে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাজের অপশন দেখতে পাবেন সেখান থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটিকে Select করে Ok করতে হবে।
৬) এরপর আরেকটি নতুন পেজ খুলবে সেখানে চাকরিপ্রার্থীদের কয়েকটি সহজ প্রশ্ন করা হবে। এই প্রশ্নগুলির ঠিকঠাক মতো উত্তর দিলে চাকরিপ্রার্থীদের দেওয়া উত্তরের ভিত্তিতে তাদেরকে নম্বর দেওয়া হবে।
৭) এরপর হ্যাঁ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৮) এরপর “ফাইনাল কাউন্সিলিং এর জন্য যোগাযোগ করুন” এই লিঙ্কে ক্লিক করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হারকে যত শীঘ্র সম্ভব হ্রাস করে রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের দিশা খুঁজে পেতে সাহায্য করতেই রাজ্য সরকারের এই অভিনব উদ্যোগ। তবে জানিয়ে রাখি, এই “আমার কর্মদিশা” প্রকল্পের আওতায় শুধু যে বেকার যুবক যুবতীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাই নয়। বরং প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাদেরকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বৃত্তিও প্রদান করা হবে।