শুক্রবারই দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরেই ক্ষোভের আগুনে তেতেপুড়ে উঠেছে দলের অন্দর। উত্তর থেকে দক্ষিণ ক্ষোভের আগুন। কোথাও কোথাও প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন কর্মী-সমর্থকরা। অবরোধ-বিক্ষোভে জেরবার অবস্থা। কোথাও আবার দলছাড়ার হিড়িক। শুক্রবার বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শ্যামল রায়ের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল । তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রার্থী বদলের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করছে ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। তারা বনগাঁর পৌর প্রশাসক শংকর আঢ্যকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন। শনিবার সকাল হতেই শতাধিক ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী সমর্থক বনগাঁ ত্রিকোণ পার্ক সংলগ্ন সেন্ট্রাল পার্টি অফিস থেকে মিছিল শুরু করেন। বনগাঁ বাটার মোড়ে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলতে থাকে। শঙ্করবাবু বলেন, ”প্রার্থী হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম। হইনি। কর্মীরাই শেষ কথা। কর্মীরা যেটা বলবে সেটাই হবে।” তেতে উঠেছে ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রও। এখানে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছে অভিনেতা ও পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নাম ঘোষণা করার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। ব্যারাকপুর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক উত্তম দাস বলেন, ”সাধারণ মানুষের পাশে রাতদিন আমি ছিলাম। বিগত দিনে অর্জুন সিং বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর ব্যারাকপুরের সাংগঠনিক দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কে ধরে রেখেছিলাম। কারণ দীনেশ ত্রিবেদী ছিলেন বহিরাগত। আমি সামলেছি ব্যারাকপুর। কিন্তু এবারও টিকিট পেল বাইরের প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী। ক’জন চেনে তাঁকে?”
প্রার্থী বদল এর দাবিতে উত্তাল হল বসিরহাট উত্তর বিধানসভাও। এই কেন্দ্রে রফিকুল ইসলাম মণ্ডলকে প্রার্থী করায় পঞ্চায়েত সভাপতি- ব্লক সভাপতি- প্রধান-উপপ্রধান সহ আরও অনেকেই পদত্যাগপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান এটিএম আব্দুল্লাহ রনি। তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা হতেই বিদ্রোহ শুরু জলপাইগুড়ি জেলাতেও। দলীয় নেতৃত্বকে টেলিফোনে হুমকি দিয়ে নির্দল হয়ে লড়ার ঘোষণা করলেন উত্তরের কেষ্টদা। তোপ দাগলেন প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধেও। টিকিট না পেয়ে বেজায় চটেছেন কৃষ্ণ দাস। নির্দল হয়ে রাজগঞ্জ আসনে লড়ে জিতে এই আসনটি দিদিকে উপহার দিতে চান বলে সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। রাজগঞ্জ আসনে এই নিয়ে ছ’বার টিকিট পেলেন খগেশ্বর রায়। আর তাতেই ক্ষোভ এসসিএসটি ওবিসি সেলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি, দাপুটে নেতা কৃষ্ণ দাস। এদিকে ”কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে লোক আছে। তাঁর এক ডাকে পাঁচ দশ হাজার লোক বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে।”এমন মন্তব্য করে দলের অস্বস্তি বাড়ালেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যানী। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ আসনে এই নিয়ে টানা ছবার তৃনমূলের টিকিট পেলেন খগেশ্বর রায়। প্রথম দুবার হারার পরেও ২০০৯ সালের উপ নির্বাচনের সময় থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বার নির্বাচিত হয়েছে। এবারেও টিকিট পেয়েছেন উত্তরবঙ্গের প্রথম তৃণমূল বিধায়ক। খগেশ্বর রায় একদিকে যেমন বিধায়ক, অন্যদিকে তিনি তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির চেয়ারম্যান। বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ কারণে তৃণমূলের বর্তমান জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যানীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায় বলেই জেলা তৃণমূলের অন্দরের খবর। অপরদিকে দাপুটে নেতা কৃষ্ণ দাস আবার তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যানীর ঘনিষ্ঠ। এবারে রাজগঞ্জ বিধানসভা আসনে প্রার্থী হিসেবে অন্যতম দাবীদার ছিলেন কৃষ্ণবাবু। কিন্তু শুক্রবার প্রার্থী ঘোষনার পর খগেশ্বর রায় ফের টিকিট পাওয়ায় কৃষ্ণবাবু হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর বাড়িতে ভিড় করা কয়েক হাজার অনুগামীদের সামনে এসে তিনি মাইক নিয়ে ঘোষণা করেন তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে রাজগঞ্জ বিধানসভা আসনে লড়বেন। এবং আগামী রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝে রাজগঞ্জে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে একটি মেগা র্যালি বের করবেন। কৃষ্ণ দাসের এই সিদ্ধান্তের কথা তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যানীকে জানালে তিনি বলেন, ”কৃষ্ণ দাস কী করবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে রাজ্যের সমস্ত আসনেই প্রার্থী মমতা ব্যানার্জী। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে জেলা জুড়ে বিজেপির জয়জয়কারের পর তৃণমূলের নেতারা একরকম ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর দল সৌরভ চক্রবর্তীকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে আমাকে জেলা সভাপতি করে। সেই সময় জলপাইগুড়িতে প্রচুর মানুষ নিয়ে মিছিল করেন কৃষ্ণ দাস। এরপর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।