সমস্ত বাজি (Fire Crackers) পোড়ানো নিষিদ্ধ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সব ধরনের বাজি বিক্রি ও পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিলেন বাজি ব্য়বসায়ীরা।
হাইকোর্টের রায় খারিজ! কালীপুজোয় পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানোয় ছাড়পত্র সুপ্রিম কোর্টের
Read More-Madhyamik 2022: কবে থেকে শুরু হবে মাধ্যমিক পরীক্ষা? দেখে নিন পুরো সূচি
স্পেশাল ভ্যাকেশন বেঞ্চে আজ সোমবার সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। পরিবেশ বান্ধব বাজি বা গ্রিন ক্যাকার্স পোড়ানো যাবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বাজি বিক্রি বন্ধ নয়, আগেই রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিনের শুনানিতে সেই রায়ই বহাল রাখা হল। কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়ছিল সমস্ত রকম বাজি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। কালীপুজো, দীপাবলী কিংবা ক্রিসমাস, কোনও উত্সবেই বাজি ফাটানো বা বিক্রি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে পরিবেশ বান্ধব বাজি ফাটানোর কথা বলেছিল, তাও খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়েছিল। মামলাটি করেছিলেন এক পরিবেশ কর্মী। তাঁর যুক্তি ছিল, করোনা সংক্রমণ এখনও গুরুতর পর্যায়ে রয়েছে বঙ্গে। এর মধ্যে দূষণও বাড়ছে। কাজেই বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ না করলে মানুষের জীবন ও পরিবেশের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে বাজির ধোঁয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। সঙ্কটাপন্ন রোগীরাও বিপদে পড়তে পারেন।
Read More-তালিবানরা ভারতের দিকে এগোলেই ‘এয়ার স্ট্রাইক’ করা হবে, হুঁশিয়ারি যোগী আদিত্যনাথের
গত বছরও হাইকোর্ট বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। মামলাকারীর আবেদন শুনে হাইকোর্টের বিচারপতিদের বক্তব্য ছিল, কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক রয়েছে। এমন অবস্থায় বাজি পোড়ানো বা বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া যায় না। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, সমস্ত রকম বাজি পোড়ানো বন্ধ করা যাবে না। বেরিয়াম লবণের আধিক্য আছে এমন ধরনের বাজি নিষিদ্ধ হবে। পরিবেশ বান্ধব সবুজ বাজি পোড়ানো যাবে। এরপরেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে জোড়া মামলা দায়ের হয়েছিল রবিবার। আজ সেই মামলারই শুনানি ছিল।
Read More-খাস কলকাতা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র–সহ এক দুষ্কৃতী গ্রেফতার, শহর জুরে চাঞ্চল্য
রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেছেন আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার। ফায়ার ক্র্যাকার অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে সওান করেন সিদ্ধার্ধ ভাটনাগর। ফায়ার ক্র্যাকার অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে ভাটনগর বলেন, পরিবেশবান্ধব বাজি ব্যবহারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ৩টি এবং ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের ২টি রায় রয়েছে। অথচ কলকাতা হাই কোর্ট এই বাজির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তিনি এনজিটি-র ২০২০ সালের রায়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ২৯ অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালতের ওই নির্দেশ বলে দিচ্ছে, আতশবাজির ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়। বাজি বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়বেন যা কাম্য নয়। কলকাতা হাইকোর্ট তার নির্দেশে বলেছিল, পরিবেশ বান্ধব বাজি শণাক্ত করার পরিকাঠামো নেই রাজ্যে। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনটা গ্রিন ক্র্যাকার তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়। এদিনের শুনানি চলার সময় শিলিগুলি ফায়ার ক্র্যাকার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মালবিকা ত্রিবেদী বলেন, তেলেঙ্গানা হাইকোর্টও বাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পরে সেই রায় খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বাস্তবিক সমস্যাগুলো বুঝেই সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে মামলাকারীদের আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ বলেন, বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানেনি। দেখা গেছে তারা এমন পদার্থ দিয়ে বাজি তৈরি করে যা পরিবেশ বান্ধব নয়। ইতিমধ্যেই সিবিআই কয়েক কিলোগ্রাম বেরিয়াম উদ্ধার করেছে। তাই রাজ্যবাসীর সুরক্ষার জন্যই হাইকোর্ট এমন রায় দিয়েছে। হাইকোর্টের যুক্তির যথেষ্ট ভারসাম্য আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাজ্যের হয়ে আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার বলেন, হাইকোর্টের ভিত্তিহীন আশঙ্কা আছে। কোন বাজি পরিবেশবান্ধব তা পরীক্ষা করার জন্য অ্যাপ আছে। ২০১৮ সাল থেকে সেই অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপে স্ক্যান করে দেখলেই বোঝা যায়, কোন বাজি পরিবেশ বান্ধব আর কোনটি নয়। এর ভিত্তিতেই ২৪টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। অবৈধ বাজি বিক্রির অভিযোগে ৪৬জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। আইনজীবীর দাবি, চলতি মাসে আরও ৭টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্যের তরফে বক্তব্য শোনার পরে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নিয়মিত বাজি পরীক্ষা করে কিনা। তার জবাবে আইনজীবী গ্রোভার বলেন, পুলিশ নিয়মিত বাজারগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে। তাছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে নাকা চেকিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবুজ পটকা ইতিমধ্যেই খুচরো বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে গেছে। কিউআর কোড স্ক্যান করার ব্যবস্থাও থাকছে। কোনটি গ্রিন ক্র্যাকার ও কোনটি নকল বাজি তা পরীক্ষা করার কাজ চলছে।