বিধানসভায় বিএসএফ-এর (BSF) সীমাবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কেন্দ্র বিরোধী প্রস্তাব পাশ ও সিবিআই, ইডি-র দুই তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশকে কেন্দ্র করে ফের রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত প্রকাশ্যে এসে পড়ল।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ নভেম্বর বিধানসভায় বিএসএফ-এর সীমা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রস্তাব আনে রাজ্য সরকার।
প্রস্তাব পেশ করে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিএসএফ-এর এই সীমাবৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত আসলে ঘুরিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার মতো বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পেরে এখন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে ঢুকতে চাইছে।”
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর আঘাত বলেও দাবি করে বিধানসভায় প্রস্তাব আনে শাসক দল। যদিও, তৃণমূলের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিজেপি। শেষপর্যন্ত সংখ্যাধিক্যের জোরে কেন্দ্র বিরেধী এই প্রস্তাব পাশ হয় বিধানসভায়। অবশ্য এই প্রস্তাবকে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “এই প্রস্তাবের কোন আইনগত বৈধতা নেই। প্রস্তাব পাশ হলেও তাই তা গুরুত্বহীন।”
বরং, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে গতকাল, বিএসএফ-এর দফতরে গিয়ে জওয়ানদের ‘পদ্ম ফুল’ উপহার দিয়ে আসে বিজেপি। এরপরেই, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় প্রশাসনিক পথে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। গতকালই বিধানসভার কাছে পাঠানো চিঠির কপি আজ টুইট করেন রাজ্যপাল ধনখড়। বিধানসভার সচিবালয়কে উদ্দেশ্য করে লেখা ওই চিঠিতে রাজ্যপাল সম্প্রতি বিধানসভায় পাশ হওয়া ওই প্রস্তাব ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে নেওয়া স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশের বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠিয়েছেন।
আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিধানসভাকে এই দুটি বিষয়ের বিস্তারিত রিপোর্ট রাজভবনকে পাঠাতে হবে। রাজ্যপাল তাঁর চিঠিতে শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি। অতীতে এ ধরনের একাধিক ইস্যুতে বিধানসভার কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো সত্বেও তার সদুত্তর পাননি বলে অভিযোগ করেছেন ধনখড় এবং এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন রাজ্যপাল।
যদিও, রাজ্যপালের এই অভিযোগকে কার্যত কোন পাত্তাই দিতে চাইছে না রাজ্য। রাজ্যপালের চিঠির পাল্টা জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “রাজ্যপাল বিধানসভার প্রতিটি কাজে বাধা দিচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। ” অন্যদিকে, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যপাল রাজ্যের সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর চিঠি হাতে পেলে বিধানসভার সচিবালয় জবাব পাঠিয়ে দেবে। আর, রিপোর্ট না পাঠানো নিয়ে রাজ্যপালের অভিযোগ ঠিক নয়।” বিধানসভার সচিবালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “এর আগে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে রাজ্যের বিলের বিস্তারিত রিপোর্ট উনি চেয়ে পাঠান। প্রথম দফার পাঠানো রিপোর্টে উনি সন্তুষ্ট হতে না পারায়, ফের দ্বিতীয়বার ওঁর চাহিদা মতই সব রিপোর্ট পাঠিয়েছিল বিধানসভা।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, কার্যত কেন্দ্র বিরোধী দুই ইস্যুতে রাজ্যপালের এই পদক্ষেপে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত আবার সামনে এসে পড়ল.