আজ মহাষষ্ঠী, দেবীর বোধন। সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু মা দুর্গার বোধনের প্রস্তুতি। ব্যস্ততা পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। একইরকম ব্যস্ততা বাড়ির পুজোগুলিতেও । কমবেশি ভিড়ও দেখা যাচ্ছে পুজোগুলিতে। করোনা পরস্থিতিতে এবারেও সমস্তরকম নিয়মবিধি মেনেই আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপুজোর।
Durga Puja 2021: আজ মহাষষ্ঠী, করোনা বিধি মেনেই সর্বত্র শুরু মা দুর্গার বোধনের প্রস্তুতি
Read More-ফের স্থগিত ইউজিসি নেট পরীক্ষা, নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে শীঘ্রই
তবে ষষ্ঠীতেই (Maha Sasthi 2021) দেবীর বোধন কেন তা নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে প্রশ্ন। সেক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল এর নেপথ্যে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। বোধন কথার অর্থ হল জাগান বা জাগ্রত করা। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের সময় দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তবে সে ছিল অকালবোধন। কিন্তু সেই বোধন ‘অকাল’ কেন, তার পেছনেও রয়েছে গল্প। পুরাণ মতে সূর্যের উত্তরায়ন হচ্ছে দেবতাদের দিন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ৬ মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। আর দিনের বেলায় দেবতারা জেগে থাকেন। তাই শাস্ত্র মতে দিনেই দেবতাদের পুজো করা হয়। আবার সূর্যের দক্ষিনায়ন হল দেবতাদের রাত। সূর্যের এই গমনকালের ছয় মাসকে দেবতাদের এক রাত ধরা হয়। আর রাতে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই রাতে পুজো করার কোনও বিধান নেই শাস্ত্রে। কিন্তু রামচন্দ্র দেবীর পুজো করেছিলেন শরৎকালে, যা দক্ষিনায়নের মধ্যে পড়ে।সেই দিক থেকে দেখতে গেলে শরৎকাল দেবীর পুজোর জন্য ‘অকাল’। কিন্তু দেবীর পুজো করতে হলে তো তাঁর বোধন অর্থাৎ তাঁকে জাগরিত করতে হবে। তাই শরৎকালের এই বোধনকে অকাল বোধন হিসেবে ধরা হয়। তবে রামচন্দ্রের আগে প্রথম আদ্যাশক্তি মহামায়ার পুজো করেছিলেন রাজর্ষি সুরথ। আর তাঁর সঙ্গী ছিলেন সমাধি বৈশ্য। সেই পুজোকেই বর্তমানে আমরা বাসন্তী নামে জানি।
এবার ফেরা যাক দেবীর বোধন প্রসঙ্গে। রাবণ ছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের বরপ্রাপ্ত। আবার দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপের একনিষ্ঠ সাধকও ছিলেন তিনি। কিন্তু রামের হাতে রাবণের বধ ছিল দৈববাণী। তাই রাম-রাবণের যুদ্ধ যখন অবশ্যম্ভাবী সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার দ্বারস্থ হলেন দেবতারা। কিন্তু দেবী তখন নিদ্রিতা। দেবতাদের অনুরোধে স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীর পুজো করে তাঁকে তুষ্ট করার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবী বললেন, যদি রামচন্দ্র তাঁর বোধন করেন, তবেই তিনি রাবণ বধে তাঁকে সাহায্য করবেন। রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানালেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। যেহেতু সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর গড়ে তাঁর আরাধনা প্রস্তুতি করলেন। সেসময় ধ্যানে বসে ব্রহ্মা দেখলেন একটি বিল্ব বৃক্ষ বা বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনিই দেবী। তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পুজো হবে ওই বেলগাছের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বিল্ব শাখা বা বৃক্ষের পুজো করে তা প্রতিষ্ঠা করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, শুরু হয় দেবীর আরাধনা।