প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) সঙ্গে বৈঠক (meeting) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বৈঠকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর সামনে রাখা তাঁর দাবিগুলির কথা তুলে ধরেছে।
পাশাপাশি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর শক্তিশালী করতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভাল সম্পর্ক জরুরি।
রাজ্যের বকেয়ার দাবি
মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে বেরিয়ে এসে প্রথম যে বিষয়টির কথা উল্লেখ করেছেন তা হল রাজ্যের বকেয়া। তিনি বলেছেন, রাজ্যে ফনি, যশের মতো একের পর এক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। সেইসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রে বকেয়া দেয়নি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকার পায় কেন্দ্রের কাছ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, সব মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকা তিনি দ্রুত মেটানোর দাবি করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে জানিয়েছেন, তিনি পরিস্থিতি দেখে জানাবেন।
বিএসএফ নিয়ে আলোচনা
১১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ বলে, পশ্চিমবঙ্গে বিএসএফ-এর কাজের পরিধি সীমান্তের ১৫ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিমি করা হয়েছে। যা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করছে তৃণমূল-সহ অন্য দলগুলি। এদিন এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আঘাত করেছে। এছাড়াও বিএসএফ আইনশৃঙ্খলায় সমস্যা তৈরি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন। এব্যাপারে তিনি দিন কয়েক আগে সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিকে তিনজনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন। অবিলম্বে বিএসএফ নিয়ে কেন্দ্রীয় আদেশ প্রত্যাহারের দাবিও তিনি করেছেন।
অধিক সংখ্যায় ভ্যাকসিনের দাবি
প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর অন্য দাবিগুলির মধ্যে ছিল রাজ্যকে অধিক সংখ্যা ভ্যাকসিন প্রদান। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কেন্দ্র কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্কুল কলেজ খুলে গিয়েছে। সেই কারণে জরুরি ভিত্তিতে এই বয়সের সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি রাজ্যে এখনও বহু মানুষের ভ্যাকসিন দেওয়া বাকি রয়েছে। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি সংখ্যায় ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি করেছেন তিনি।
পাট শিল্পে নজর দেওয়ার দাবি
মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের পাটশিল্পে নজর দেওয়ার দাবি করেছেন। সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্যে চটকলের সংখ্যা সব থেকে বেশি। সারা দেশে চটের ব্যবহার যাতে বাড়ানো যায়, সেব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সচেষ্ট হবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ত্রিপুরায় হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ত্রিপুরায় হিংসার অভিযোগ তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী সামনে। এর আগে তৃণমূল সাংসদরা বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেছেন, যেসব ঘটনা ত্রিপুরায় ঘটছে তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। যেকোনও মূল্যে এইসব ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে সায়নী ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সেই সময় থানায় হামলার বিষয়টি উল্লেখ করেন। সায়নী ঘোযের গ্রেফতারির প্রসঙ্গও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, একটা সময়ে বামেদের হাত থেকে ত্রিপুরার ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সন্তোষমোহন দেব এবং মনোরঞ্জন ভক্তরা।
বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীকে
মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রীকে আগামী বছরে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শিল্প বাণিজ্যে উন্নতি ছাড়া কোনও রাজ্যের উন্নতি সম্ভব নয়। বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই শিল্প বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন। রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকলেও কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে অত্যন্ত জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।