রান্নার কাজ ছাড়াও যে বেকিং সোডা আমরা কিচেন সিংক, টয়লেট পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করি তা আমাদের ত্বকের মতো সেনসিটিভ জায়গার জন্য আদৌ কতটুকু ভালো, কখনও কি মাথায় এমন প্রশ্ন এসেছে?
বেকিং সোডার রাসায়নিক নাম হলো “সোডিয়াম বাইকার্বনেট”। অনেক সময় একে “বাইকার্বোনেট অব সোডা” ও বলা হয়। আমাদের দেশে এটি পাওয়া যায় খাবার সোডা নামে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক মিনারেল যা মাটির নিচ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এটি ক্ষারীয়, যার পি এইচ ৯।
অনেকেই দেখবেন বেকিং সোডার পরিবর্তে বেকিং পাউডার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই বেকিং পাউডারও কি ত্বকের জন্য উপকারী? তবে জানুন, বেকিং পাউডার হলো পাউডার জাতীয় পদার্থ যা বেকিং সোডা ও ক্রিম অব টারটারের মতো এক প্রকার পাউডার এসিডের মিশ্রণ।এই মিশ্রণের সাথে কর্নস্টার্চও ব্যবহার করা হয় যা মিশ্রণটিকে শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে আছে, সোডিয়াম অ্যালুমিনাইট সালফেট এবং মনোক্যালসিয়াম।
ত্বকে বেকিং সোডার পরিবর্তে কি বেকিং পাউডার ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর হল, অবশ্যই না!
কারণ রূপচর্চায় বেকিং সোডা বা বাইকার্বনেট অব সোডা ব্যবহার করতে বলা হয়। কিন্তু বেকিং পাউডারের সাথে থাকে কর্ন স্টার্চ ও ক্রিম অব টারটার যা এক প্রকার দুর্বল এসিড। তাই বেকিং পাউডার শুধু মাত্র বেকিং সোডা নয়, এটি বেকিং সোডা ও কর্ন স্টার্চের মিশ্রণ। যা রান্নার কাজে ব্যবহারের উপযোগী। তাছাড়া একটু ভালোভাবে পড়ে নিলে দেখবেন বেকিং পাউডারের ক্যানে লেখায় আছে “It is made specially for baking”। কাজেই বুঝতে পারছেন ত্বকের যত্নে আসলে বেকিং সোডার চেয়ে ভয়ঙ্কর উপাদান হল বেকিং পাউডার!
তবে কি রূপচর্চার জন্য বেকিং পাউডারের বদলে বেকিং সোডা ব্যবহার করবো! তাই তো মনে হচ্ছে?
কিন্তু ব্যবহারের আগে জেনে নেয়া দরকার আমাদের ত্বক কতটা বেকিং সোডা নিতে পারে ও এর ক্ষতিকর প্রভাব কতটুকু। মুখের পিম্পল, ব্রণের দাগ, ব্ল্যাকহেডস দূর করতে, ত্বক ফর্সা করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এর রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টি ফাংগাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ । তাই এটি বাসাবাড়ির সিংক, কিচেন, টয়লেট পরিষ্কারে খুব কার্যকরি। কিন্তু আপনার ত্বকের জন্য এটি খুবই হার্শ এবং ত্বকের অনেক ক্ষতিসাধন করে। তাছাড়া বেকিং সোডা ব্যবহারের পর যে ইন্সট্যান্ট ফর্সা দেখায় তা আসলে আপনার পোর আনক্লগ হয়ে যাওয়ার কারণে। পরবর্তিতে এই আনক্লগ পোর বাইরের নানারকম উপাদানের সংস্পর্শে এসে আপনার ত্বকে সহজেই ইনফেকশন সৃষ্টি করে।আরেকটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি…
আমাদের ত্বকে কয়েকটি লেয়ারে বিভক্ত। একদম উপরের বা বাইরের দিকের লেয়ারটিকে বলা হয় এপিডার্মিস, যার নাম আমরা সবাই জানি। আমাদের ত্বকের পি এইচ ৪ থেকে ৫ এর মাঝামাঝি, যা এসিডিক। ত্বকের এই এসিডিক পরিবেশ কে বলা হয় ‘এসিড মেন্টেল’। অপরদিকে বেকিং পাউডারের পি এইচ ৯, যা ক্ষারীয়। যেখানে পানির নিউট্রাল পি এইচ ৭। সাবান আপনার ত্বকের জন্য যতটা ক্ষতিকর বেকিং সোডাও ঠিক ততোটাই ক্ষতিকর। ত্বকের এমন এসিডিক হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ত্বককে বাইরের দূষণ, ক্ষতিকর প্রভাব ও ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করা। সাথে সাথে এটি ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে এবং ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়।
যখন আপনি আপনার ত্বকে অ্যাল্কেলাইন বা ক্ষারীয় কিছু ব্যবহার করবেন তখন তা আপনার ত্বকের এই এসিড মেন্টেল কে ভেঙ্গে দেয়, সাথে সাথে আপনার ত্বকের ব্যাকটেরিয়াল ফ্লোরার কম্পোজিশনও নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া এসিড মেন্টেল আপনার ত্বকে ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই ‘এসিড মেন্টেলের’ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকের ময়েশ্চার লেভেল নষ্ট হয়ে যায়। যা আপনার ত্বককে করে অতিরিক্ত শুষ্ক। এমনকি ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখার ক্ষমতা অনেকসময় পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু পি এইচ লেভেলের পরিমাণ সন্তোষজনক তাই এর ক্ষতির পরিমাণটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই আপনি যত বেশি বেকিং সোডা ব্যবহার করবেন আপনার ত্বক ধীরে ধীরে তত বেশি নষ্ট হতে থাকবে।