তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ দিবসের পাল্টা বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার কলকাতায়। রাজ্যজুড়ে গেরুয়া শিবিরের সদস্যরা পালন করছেন ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও দিবস।’ আর তা ঘিরেই সোমবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মধ্য কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ। বিশৃঙ্খলতা ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হলেন বিজেপি যুব মোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শীলভদ্র দত্ত-সহ বেশ কয়েকজন। প্রতিবাদে সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভে বসেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। ঘটনার পর থেকে এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবারই স্থির হয়ে গিয়েছিল কর্মসূচি। সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ রানি রাসমণি রোডে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও দিবস’ পালন করবেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা। সঙ্গে থাকবেন রাজ্য বিজেপির অন্যান্য নেতানেত্রীরা। সেইমতো এদিন দুপুরে ১টারও আগে থেকে রানি রাসমণিতে কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি শুরু করেছিল গেরুয়া শিবিরের কর্মী, সমর্থকরা। নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। অভিযোগ, পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডার পর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরপরই পুলিশ তাঁকে এবং আরেক বিজেপি নেতা শীলভদ্র দত্তকে আটক করে। তাঁদের জোর করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন শীলভদ্র দত্ত। পরে কয়েকজন মহিলাকেও আটক করা হয়। পরে কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে আটক হন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, দেবশ্রী চৌধুরীরাও। তাঁদের মহামারী আইনে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বিজেপির অভিযোগ, কর্মসূচিতে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিয়েছে। রাস্তার দু’দিকে ব্য়ারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। এমনকী মহিলাদেরও জোর করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ডিসি সেন্ট্রাল আকাশ মেঘারিয়াও পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। তাঁর সামনেই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের হাতাহাতি হয়। বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন তিনি।
বিজেপির ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও দিবস’ কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার কলকাতায়, আটক শুভেন্দু, দিলীপ, সৌমিত্র খাঁ সহ একাধিক নেতা
Read More-প্রাচীন প্রথা মেনেই বড়দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হল রাজার শহরে
এদিন কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ, ধর্নার আয়োজন করেছে গেরুয়া শিবির। কলকাতায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়েও তৈরি হয় ধর্না মঞ্চ। সেখানে থাকার কথা ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীদের। পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ারও কর্মসূচি নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। এদিন সেই কর্মসূচির শুরুতেই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশ ও বিজেপি কর্মীরা।
ধর্না কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই যখন বিজেপি কর্মী নেতারা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে আসছিলেন, অভিযোগ তখনই তাঁদের আটক করে কলকাতা পুলিশ। তখনও দিলীপ ঘোষরা এসে পৌঁছননি। যেহেতু রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে গেলেই বিজেপি কর্মীদের আটক করা হচ্ছে, তাই দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে পৌঁছে ধর্নায় বসতেই পৌঁছয় পুলিশের বিশাল বাহিনী। শুরু হয় গোলমাল। দিলীপ, শুভেন্দুদের গান্ধি মূর্তির সামনে থেকে টেনে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। বিজেপির অভিযোগ, মহিলা কর্মীদের চুলের মুঠি ধরে টেনে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘যারা ত্রিপুরায় গিয়ে বলে গণতন্ত্র নেই। তারা কী করে এখানে এই ধরনের কাজ করছে।’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘এটা তো কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। অতিমারি আইনে এভাবে কোথাও এতো ভিড় করা যায় না বলেই প্রশাসন জানিয়েছে। সেই আইন বলেই প্রশাসন যা করার করবে।’