More
    Homeপশ্চিমবঙ্গডায়মন্ড হারবারে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে বাংলার মুখ পুরস্কার

    ডায়মন্ড হারবারে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে বাংলার মুখ পুরস্কার

    দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী বাংলার মুখ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেল ডায়মন্ডহারবার শহরে। এবারের ‘বাংলার মুখ পুরস্কার ২৪’ পেলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি অরুণ শীল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিথযশা দুই শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া ও রাশেদ রউফ। ছিল বাংলাদেশের কবি ও কথাসাহিত্যিক শেলী সেনগুপ্তা ও কবি আজিজ রাহমান।ভারতীয় কবি হিসেবে বাংলার মুখ পুরস্কার ২০২৪ পেলেন করা হলো কবি সুদীপ্ত মাজি, কবি অরুণ পাঠক ও কবি নাগ সেন। একই সঙ্গে তিনজন। বর্ষীয়ান কবি, সম্পাদক ও সংগঠক বিশ্বনাথ মাঝির হাতে তুলে দেওয়া হলো একতারা সাহিত্য পুরস্কার। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজক দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাষা ও সাহিত্যচর্চার সুবিখ্যাত সংস্থা বাংলার মুখ। প্রধান কার্যালয় ফলতার ফতেপুরে দীর্ঘদিন ধরে এই পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠান চলে আসছে। কখনো কখনো কলকাতা ও অন্যান্য জায়গাতেও এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়েছে বলে জানা যায়। ডায়মন্ড হারবার শহরে এই প্রথমবার বাংলার মুখ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেল। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল প্রজাপতি সাহিত্য সম্মেলন। একইসঙ্গে কবি বনানী চক্রবর্তী ও কবি উজ্জ্বল হালদারের মোট তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবি বনানী চক্রবর্তীর ‘বাবলা ফুলের নাকছাবি’ ও ‘অনুগত স্বর্ণরেণুকণা’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ উদ্বোধন করেন প্রথিতযশা কবি রফিক উল ইসলাম ও প্রথিতযশা শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। কবি উজ্জল হালদারের ‘উঠোন ও ঘরদোরের কবিতা ‘ কাব্যগ্রন্থটি উদ্বোধন করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক বরেন্দু মন্ডল। ডায়মন্ডহারবার শহরের নদী সংলগ্ন কমলা ভবনে বসেছিল এই সাহিত্য বাসর। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে হালদার পরিবারের তত্ত্বাবধান ও আন্তরিকতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিনের উদ্বোধক ছিলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়। উদ্বোধক হিসেবে প্রদীপের প্রথম সলতেটি জ্বেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা সভাঘর করতালিতে মুখরিত হয়। সমস্ত গুণীজনেরা একে একে প্রদীপের অন্য সলতেগুলি জ্বেলে দেন। অসামান্য রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মনোজ্ঞ করে তোলেন বিদ্যানগর কলেজের অধ্যাপিকা তনুশ্রী দাস। একটানা পাঁচ ঘন্টার সাহিত্য বাসরে সভাপতিত্ব করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বরেন্দু মন্ডল। প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন প্রখ্যাত গবেষক ও বরেন্য শিশুসাহিত্যিক পার্থজিত গঙ্গোপাধ্যায়। বিশিষ্ট অতিথির আসন অলংকৃত করেন কবি আনসার উল হক ও অধ্যাপক-কবি বনানী চক্রবর্তী। সৃজনশীল নৃত্যে অংশিকা দাস ও ঈশানী মোদক সকলের মন ছুঁয়ে যায়।
    এদিনের অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি দীপক হালদার, বিশিষ্ট কবি রফিক উল ইসলাম, বিশিষ্ট কবি সৌমিত বসু ও বিশিষ্ট কবি তাজিমুর রহমান।‌ এছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানের উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকরা। কবিতা পাঠে অংশ নেন দুই বাংলার পঞ্চাশ জনেরও বেশি কবি সাহিত্যিক। উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন বড় মাপের আবৃত্তিশিল্পী।
    ডায়মন্ড হারবার শহরের বিশিষ্ট সাংবাদিক বন্ধুরাও।
    সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রতিবেশী দেশের লেখিকা সেলিনা হোসেনের কথা বলেন। সেলিনা হোসেনের একটা গল্পের পটভূমি নিয়ে অসামান্য আলোচনা করেন। প্রধান অতিথি ড. পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক সাহিত্যবাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বাংলাদেশের সাহিত্য ,সংস্কৃতি সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন। পাশাপাশি ‘বাংলার মুখ ‘ প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ও ইতিহাস গড়ে তোলার প্রতি তিনি সাধুবাদ জানান।
    বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘বাংলার মুখ’ এর প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট লেখক অবশেষ দাস বলেন, এইভাবে যতদিন সম্ভব আমরা সাহিত্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই।‌ দুই বাংলার কীর্তিমান লেখকদের বরাবর এই সম্মান দেওয়া হয়। এই সম্মান প্রদানের মধ্যে দিয়ে ‘বাংলার মুখ’ নিজে গর্বিত হয়। বর্তমান প্রজন্ম সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি আরও মনোযোগী হলে সমাজের শিষ্টাচার ও সৌজন্যের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। সস্তা বিনোদনের সঙ্গে মূল স্তরের সংস্কৃতির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটা চলমান প্রজন্মের বুঝতে হবে। সে বিষয়ে বাংলার মুখ অনেকটা সফল হয়েছে। বাংলার মুখের হাত ধরে বহু ছাত্র-ছাত্রী সংস্কৃতির জন্যে বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই শুরু করেছে। তারাই বাংলার মুখ হয়ে উঠছে দিনে দিনে। আগামীদিনে ‘বাংলার মুখ ‘ আরও বড় পরিকল্পনা নিয়ে আসছে। জেলার সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আছে। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যা সম্পৃক্ত হয়ে আছে। সমগ্র অনুষ্ঠানের পুরোহিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বরেন্দ্র মন্ডল খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিন্দুতে যেন সিন্ধু দর্শন করালেন। সৌজন্য ও শিষ্টাচারের সর্বোত্তম ভাষা দিয়ে সমগ্র আয়জনের আলোটুকু খুঁজে দিলেন। আর কিভাবে এই আয়োজন আরও ক্ষুরধার ও সূক্ষ্ম হতে পারে সে বিষয়েও মতামত দিলেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভূমিপুত্র হিসেবে জেলার এই ধরণের কর্মকান্ড তাঁকে বেশ মোহিত করেছে, সেকথাও বলতে তিনি ভোলেননি। দুই দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন কতটা জরুরি সে বিষয়েও তিনি বেশ জোর দিয়ে বক্তব্য রাখেন। সবমিলিয়ে একদিনের এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ডায়মন্ড হারবার শহরের জন্যে অনেকখানি অক্সিজেন এনে দেবে বলে বিশ্বাস হয়। বহুদিন পর এই শহরে এইধরণের একটা অনুষ্ঠান হয়ে গেল, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments