উত্তরাখণ্ডে লাগাতার বৃষ্টি, ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যা এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এমনিতেই উত্সবের মরসুমে সে রাজ্যে এখন পর্যটক ভর্তি। ফলে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সকলের। বানভাসি জিম করবেট জাতীয় উদ্যান সহ রাজ্যটির বিভিন্ন অঞ্চল। পাহাড় থেকে ধস নামার ফলে সড়কগুলি অবরুদ্ধ। রাস্তা জুড়ে শুধু গাড়ির সারি আর অবরুদ্ধ মানুষ। ফের ধস নামার প্রবল আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। পর্যটকদের অনেককেই উদ্ধার করে স্থানীয় গ্রামগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই রাজ্যের অনেক জায়গায় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৭ পৌঁছেছে। শুধু নৈনিতালেই মারা গিয়েছেন ২৫ জন। নিখোঁজের সংখ্যাও অসংখ্য। উত্তরাখণ্ডে সর্বত্র আতঙ্কের পরিবেশ।
বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড: হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা! আজ যাচ্ছেন অমিত শাহ
Read More-উত্তরবঙ্গে জারি ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, ধস কালিম্পং- দার্জিলিঙে, থমকে জাতীয় সড়ক
ইতিমধ্যে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার কুমায়ুন এবং গাড়োয়ালে ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ধামি। এদিকে, ভূমিধস এবং মেঘ ফাটার কারণে আসা বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে কুমায়ুনের জল স্তর কমছে বলে জানানো হলেও প্রশাসন জানিয়েছে রাস্তা খুলতে সময় লাগবে। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে অনেক এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে আছেন। এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ-এর সঙ্গে পুলিশের দলগুলিও বিপর্যস্তদের উদ্ধারে নিয়োজিত রয়েছে। রাজ্যে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সহায়তা করার জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টারকে কাজে লাগান হয়েছে।
এর মধ্যে দু’টি নৈনিতাল জেলায় মোতায়েন করা হয়েছ। উত্তরাখণ্ডের এই জেলাটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র। এবারও প্রচুর পর্যটক ভিড় জমিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু মেঘ বিস্ফোরণ এবং ভূমিধসের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নৈনিতাল। তাই পর্যটকরাও আতঙ্কে রয়েছেন। অবশ্য, যেসব স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে সেখানে রাস্তা থেকে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারের কাজ চলছে। রামনগরে আর্মি হেলিকপ্টারের সাহায্যে দু’জনেরও বেশি গ্রামবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পান্তনগরের তিনটি স্থানে আটকা পড়া ২৫ জনকে উদ্ধারের জন্য বিমান বাহিনীর ধ্রুব হেলিকপ্টারের সাহায্য নিতে হয়। নৈনিতাল যাওয়ার রাস্তায় বেশ কিছু ভূমিধসের ফলে ধ্বংসস্তূপের কারণে পর্যটন স্পটটি রাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাঁদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, চার ধাম যাত্রীদের কাছে আবেদন করেছেন, আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা যেন যেখানে রয়েছেন সেখানেই থাকেন। উত্তরাখণ্ডের ডিজিপি অশোক কুমার জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে, গাড়োয়ালের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্ধ রাস্তাগুলো ধীরে ধীরে আবার খুলে দেওয়া হচ্ছে। চার ধাম যাত্রাও শীঘ্রই শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বৃষ্টির খবর রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে আজ পর্যন্ত অর্থাত্ বুধবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।