মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই অসন্তোষ ছড়িয়েছে সেখানে। তার মধ্যে গতকাল ছিল সব থেকে ভয়ঙ্কর দিন। সেনাবাহিনীর নির্মমভাবে গুলিবর্ষণে প্রান হারালেন একটি কারখানার বেশ কিছু কর্মী। পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে।
মায়ানমারের হ্লাইনথায়া শহরে চিনা সাহায্যপ্রাপ্ত একটি কারখানায় ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি। রবিবার ওই কাপড়ের কারখানায় আগুন ধরে যায়। সেই সময়ই সেনাবাহিনী কারখানায় আটকে থাকা শ্রমিকদের প্রতি গুলিবর্ষণ শুরু করে। একে আগুনের লেলিহান শিখা অন্যদিকে লাগাতার গুলিতে একের পর এক শ্রমিকের দেহ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। জানা গিয়েছে, সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান কমপক্ষে ২২ জন। রবিবারই শহরের অন্য একপ্রান্ত অশান্তি হয়ে ওঠে। প্রায় ১৬ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে সেনার গুলিতে। প্রাণ হারিয়েছেন কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীও। সুত্রের খবর, আন্দোলনকারীরা রাজনৈতিক বন্দিদের সাহায্যকারী এক সংস্থার কর্মী ছিলেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তাঁরা সামিল হয়েছিলেন।
রবিবারের এই মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে চিনের দূতাবাস থেকে একটি বিবৃতিতে জানান হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী চিনের আর্থিক সাহায্যে পরিচালিত কাপড়ের কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। অগ্নিকান্ডের ফলে বহু চিনাকর্মীই আহত হয়েছেন। কারখানার ভিতরেও আটকে পড়েছিলেন অনেকে। চিনের তরফে মায়ানমারে আটক চিনা কর্মীদের ও চিনা সম্পত্তি রক্ষা করার অনুরোধ জানান হয়েছে।
গোটা ঘটনাতে স্তম্ভিত সকলেই। অতীব ভয়ঙ্কর এক ঘটনা বলেই মনে করছেন অনেকেই। মায়ানমার সরকারের কাছে চিনের এই অনুরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মায়ানমারের বহু জনতা। তাঁদের দাবি, সেখানে সেনা অভ্যুত্থানের পিছনে চিনা সরকারের মদত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি মায়ানমার দখল করে দেশের সেনাবাহিনী। তারপরই আটক করা হয় নোবেলজয়ী জননেত্রী আন সান সু কি-কে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের আমদানি-রফতানি আইন ভঙ্গ ও জাতীয় দুর্যোগ আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করেছে জান্তা বাহিনী। এই ঘটনার পরই সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ও জননেত্রীর মুক্তির দাবিতে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মায়ানমার। সেই প্রতিবাদ চলাকালীন ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদকারীদের উপরে গুলি চালায় পুলিশ। ওই ঘটনাতেও প্রাণ হারিয়েছিলেন দুইজন, আহত হয়েছিলেন প্রায় ২০ জন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখার পরই আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে সেনাবাহিনী। যদিও সেনা পরিচালিত স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলে বলা হয়েছে, চারটি কাপড়ের কারখানা ও একটি সার কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থানে দমকল পৌঁছনোর চেষ্টা করলে প্রায় দুই হাজার মানুষ বাধা দেয়। এরপরই কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী।