রায়গঞ্জের রূপাহারে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা! নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের নয়ানজুলিতে পড়ল যাত্রীবাহী বাস।নয়নজুলিতে পড়ে থাকা বাসে আটকে পরা পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং দমকল বাহিনীর কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও।এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে পরিযায়ী শ্রমিক ভর্তি বাস, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬, আহত বহু
Read more-ল্যাম্পপোস্টে হাত দিতেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট, দমদমে মৃত ২ কিশোরী
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাত ১০টা ৩০ মিনিটে বাসটি নয়ানঝুলিতে উল্টে যায়। এক বিকট আওয়াজ শুনে লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসেন। তারাই তড়ডিঘড়ি উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন। জানা গিয়েছে, বাসটি ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) পাকুর জেলা (Pakur District) থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrate Labour) তুলতে তুলতে রায়গঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। বাসটি লখনউ (Lucknow) যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সেখানে পৌঁছানোর আগেই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে। বাসযাত্রীদের অভিযোগ চালক মত্ত অবস্থায় থাকায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনার পেতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী। চলে আসে দমকল কর্মীরা এবং জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁরাও উদ্ধারকাছে হাত লাগায়। সরকারি বাহিনী উদ্ধারকাজ শুরু করার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা অধিকাংশ জীবিত এবং অল্প-বিস্তর জখম যাত্রীদের উদ্ধার করে রাস্তার উপরে নিয়ে আসে। কিন্তু বাসের বের হওয়া দরজা কাদার মধ্যে চেপে পড়ে থাকায় অনুমান করা যাচ্ছিল না ঠিক কতজন মারা গিয়েছেন। পরে পুলিশ ক্রেন নিয়ে এসে কাদের দিকে থাকা বাসের অংশটিকে টেনে তোলে। তখনই দেখা যায় অসংখ্য দেহ বাসের জানলা ও দরজায় আটকে রয়েছে। প্রতিটি দেহই কাদা চেপে যে বসেছিল তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অনুমান এই মানুষগুলি উল্টে যাওয়ার বাসের দিকের অংশে এক্কেবারে ছিলেন। যার ফলে নয়ানজুলির কাদায় বাসটি কাত হয়ে আটকে যেতেই এরা তাতে চাপা পড়ে যান। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান এদের সকলেরই মৃত্যু কাদায় ডুবে হয়েছে।
কৃষ্ণা মণ্ডল নামে এক বাসযাত্রী জানিয়েছেন যে, বাসটি পাকুর থেকে আসছিল। লখনউ যাওয়ার জন্য পাকুর জেলার সোনাঝুড়ি মোড়ের সামসারা গ্রাম থেকে বাসে চেপেছিলেন কৃষ্ণা। তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা ছিল। নিজে কোনও মতে বাস থেকে বেরিয়ে এলেও স্ত্রী ও সন্তানের কোনও খবর বের করতে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, বাসে ওঠার পর থেকেই দেখেন চালক বেলাগামভাবে বাস ছোটাচ্ছেন। কৃষ্ণার অভিযোগ, চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা আগেই বাসটি একটি ধাবায় রাতের খাবারের জন্য থেমেছিল। সেখানে চালক আকন্ঠ মদ্যপান করে বলে অভিযোগ কৃষ্ণার। দুর্ঘটনার কিছু সময় আগে বাসের চালক একটি গাড়িকেও ধাক্কা মেরেছিল বলে কৃষ্ণা অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, আচমকাই দেখেই তাদের বাস জলের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। পরে কোনওমতে বাইরে বেরিয়ে এসে কৃষ্ণা দেখেন বাসটি একটি কাদার উপরে একদিকে পাল্টি খেয়ে পড়ে রয়েছে।
নয়ানজুলিতে বাস পড়ে গিয়েছে- এই খবর পেতেই ঘটনাস্থলে ছুটেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রণব রায়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা গিয়ে দেখেন বাসের একটি জল ও কাদার মধ্যে ডুবে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাই বাসের অন্যদিকের জানলা ভেঙে বহু মানুষকে ভিতর থেকে টেনে বের করে। এরপর দমকল বাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসে আরও কিছু মানুষকে টেনে বার করে। এদের মধ্যে কারওর মাথায়, কারও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল। কয়েক জন আবার পায়ে এবং হাতে গুরুতর চোট পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন প্রণব। তাঁরা এমন ৪ শিশুকে উদ্ধার করেছেন যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শ্যামল মণ্ডল নামে এক বাস যাত্রী জানিয়েছেন তিনি রায়গঞ্জের কাছেই ইটাহারের নন্দনগ্রাম থেকে সওয়ারি হয়েছিলেন। তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। চালক যে অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিল সে কথা জানিয়েছেন শ্যামল। তিনি দিল্লি যাবেন বলে বাসে উঠেছিলেন। পেশায় রাজমিস্ত্রি শ্যামল। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। দুর্ঘটনার পর কোনওমতে বাসের জানলার কাঁচ ভেঙে বাইরে আসেন তিনি। বাসে ঠিক কত জন যাত্রী ছিল তা বলতে পারেননি শ্যামল। তবে তাঁর অনুমান ১০০ বেশি যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে বেশকিছু মহিলা ও শিশুরাও ছিল বলে জানিয়েছেন শ্যামল।