বাংলা নতুন বছরে সূচনালগ্নে বঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঘরবন্দি তিনি। তথাপি একুশের নির্বাচনে নির্বাক নন তিনি। ঘরে থেকেও বিবৃতি দিয়ে বাংলার মানুষের কাছে রাখলেন আবেদন। তিনি এক বিবৃতিতে জানান, বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকেই যে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ভাবনা আমরা রাজ্যের মানুষকে বলার চেষ্টা করেছি তা হল কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। আমরা সেই পথ ধরেই এগিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান সরকারের হাতে গত দশ বছরে সেই কৃষিতে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। উল্লেখযোগ্য কোনও শিল্প আসেনি গত একদশকে। নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরে এখন শ্মশানের নীরবতা। সেই সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুঁড়ি করছে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন বাংলার যুব সমাজ। সরকারি ক্ষেত্রে কোনও নিয়োগ নেই। বাংলার মেধা ও কর্মদক্ষতা যা আমাদের সম্পদ, তা আমাদের রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বুদ্ধদেব বলেন, গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গ সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। যুবদের কাজের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। শিক্ষাঙ্গন কলুষিত, স্বাস্থ্য পরিষেবা গরীব মানুষের নাগালের বাইরে কার্যত ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজ রাজ্যবাসীর জীবনধারণ দুর্বিসহ করে তুলেছে। মহিলাদের নিরাপত্তা, সম্ভ্রম, আত্মনির্ভরতা সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যে আজ বিপন্ন। স্থানীয় স্তর পর্যন্ত প্রসারিত গণতন্ত্র যা ছিলো বামফ্রন্টের সময় উন্নয়নের ভিত্তি তা একেবারে ধ্বংস হয়েছে এই দশ বছরে।সর্বোপরি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে পরিবেশ পশ্চিমবঙ্গের গর্ব ছিলো তাকে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরতান্ত্রিক দাপাদাপি অন্যদিকে বিজেপির বৃহত পুঁজির স্বার্থে সর্বনাশা আর্থিক নীতি, বিভেদের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, যার পিছনে রয়েছে আরএসএসের ভয়ঙ্কর মতাদর্শ। এই পরিণতি রাজ্যে আজকের ধ্বংসচিত্র। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এই নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি সন্ধিক্ষণ। বর্তমান অবস্থার অবসান ঘটাতেই হবে। আজ বাংলার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।