More
    Homeবিনোদনবাংলা সিরিয়ালের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে 'অবাঙালি' সংস্কৃতির ছোঁয়া! বাড়ছে হিন্দির প্রভাব

    বাংলা সিরিয়ালের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ‘অবাঙালি’ সংস্কৃতির ছোঁয়া! বাড়ছে হিন্দির প্রভাব

    হনুমান জয়ন্তী আগেই বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ হয়েছে। বাংলা সিরিয়ালে যে ভাবে হিন্দির প্রভাব বাড়ছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন, সে দিন খুব বেশি দূরে নেই। এখনও সিরিয়ালে হনুমানের পুজো দেখা যায়নি বটে। কিন্তু বাঙালি পরিবারে ‘করবা চৌথ’ থেকে বিয়ের ‘সঙ্গীত’ দেখা যাচ্ছে।

    বর্তমানে বাংলা সিরিয়ালে হিন্দি গানের ব্যবহার তো বটেই, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা বিয়ের লোকাচারেও ‘অবাঙালি’ সংস্কৃতির ছোঁয়া থাকছে। বাঙালি পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে অবাঙালি সংস্কৃতির ‘সঙ্গীত’ বা ‘মেহেন্দি’র মতো অনুষ্ঠান দেখানো হচ্ছে। এমনকি ‘করবা চৌথের’ দিনে নায়িকার সঙ্গে নায়কও উপবাসে থাকছেন। সাধারণ এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অন্য প্রদেশের আদবকায়দা মিশে যাচ্ছে। ফলে এই নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।

    অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তীর কথায়, “আমার তো মনে হয় বাস্তব জীবনের প্রতিফলনই সিরিয়ালে দেখানো হয়। চারিদিকে যা ঘটছে, সেটাই ক্যামেরার সামনে তুলে ধরা হয়। সমাজের আয়নার মতো। এ বার চারিদিকে যদি এমন একটা সংস্কৃতির জোয়ার শুরু হয়, যেখানে দেখা যাচ্ছে, আমরা ঘটা করে হনুমান জয়ন্তী করছি, গণেশপুজো হচ্ছে, তবে তার ছায়া তো পড়বেই। আমার তো মনে হয়, সিরিয়াল বাস্তব জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত”।

    অভিনেতা দেবদূত ঘোষের দাবি, এমন অনেক সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণাই ছিল না। তাঁর ভাইঝির বিয়েতে প্রথম জানতে পারেন ‘সঙ্গীত’ বলে কোনও রীতি রয়েছে। দেবদূতের কথায়, “আমার মনে হয়, সিরিয়ালের এই সংস্কৃতি তখনই বাস্তব জীবনে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে, যখন মানুষ সিনেমা আর বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য করতে ভুলে যায়। শিক্ষা মানুষকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা দেয়। শিক্ষিত মানুষেরা তাই প্রভাবিত হন না”।

    অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুর কথায়, “এটা একতরফা নয়। আসলে হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাব সর্বত্র। এখন সিরিয়ালে যেমন সাজপোশাক দেখা যায়, তা কি কোনও ভাবে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে? আমার তো মনে হয় না। আসলে আমরা বাঙালিরা যত সহজে অন্য সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পারি, অন্যেরা তত সহজে পারে না। তাই এক দিকে যেমন বাস্তব জীবনের প্রভাব সিরিয়ালের গল্পে দেখা যায়, তেমনই আবার সেই গল্পগুলো বাস্তবেও খানিকটা প্রভাব ফেলে”।

    প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) বাংলা সিরিয়ালে হিন্দি গানের ব্যবহারে আপত্তির কিছু আছে বলে মনে করেন না। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রাজ্য সরকার আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন, “সিরিয়ালগুলো দেখুন না! বাংলায় অনুষ্ঠান, হিন্দি গান গাইছে”। কেন এমন, তার ‘যুক্তি’ও দেন মমতা। তিনি বলেন, “কেন গাইছে? কারণ, মার্কেটটা তা-ই। মার্কেটে যেতে গেলে, নতুন বিজ়নেসে যেতে গেলে এটা করতে হয়”।

    সেই অনুষ্ঠানে মমতা এমনও বলেছিলেন যে, পড়াশোনার মাধ্যম যা-ই হোক, খাবার টেবিলে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাঙালি যেন বাংলাতেই কথা বলে। কিন্তু ইদানীং সিরিয়ালে দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা খাবার টেবিলেও ইংরেজি তো বটেই, হিন্দিতেও কথা বলে।

    বস্তুত, বাংলা সিনেমাতেও এখন হিন্দি-বাংলা গানের এই বদল নিয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এর দু’টো কারণ। একটা সাংস্কৃতিক কারণে। অন্যটা অনুকরণ। সমাজে কিছু বদল এসেছে। সেই বদলের ছাপ পড়ছে সংস্কৃতিতে। আবার এ-ও ঠিক যে, বাংলা সিনেমা এবং সিরিয়াল বেশ কিছু দিন ধরেই মুম্বই, এখন বেশি করে দক্ষিণের অন্ধ অনুকরণ করছে। এটা দিয়ে বোঝা যায়, বাংলার মেধা বাইরে চলে যাওয়ায় একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। নতুন কিছু না করে নকলের দিকে ঝোঁক বাড়ছে”।

    একই সঙ্গে শমীকের দাবি, “দলগত ভাবে বিজেপি মনে করে সময়ের সঙ্গে চলাই সঠিক সিদ্ধান্ত। আসলে বাংলার অনেক আচারই অন্য নামে অন্য প্রদেশে রয়েছে। ‘সঙ্গীত’ তো একটা সময়ে বাংলাতেও ছিল”।

    তবে একটা বিষয় সকলেই মানছেন যে, মানুষের অবচেতনে যে সব অধরা স্বপ্ন থেকে যায়, সেগুলো পর্দায় দেখতে পছন্দ করেন। সেই কারণেই সিরিয়ালে পোশাক থেকে গৃহসজ্জায় বদল আনতে হয়েছে। সব কিছুই ‘চকচকে’ করার প্রবণতা। সেই সূত্রেই অন্য রাজ্যের সংস্কৃতি, আচার, অনুষ্ঠানও বাঙালির ঘরের টিভিতে আসছে।

    প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, টলিউডের প্রথম সারির পরিচালক রাজ চক্রবর্তী হনুমান জয়ন্তী নিয়ে ব্যস্ত। তবে সেটা ব্যারাকপুরের বিধায়ক হিসাবে। এক নিয়ে তৃণমূলের বিধায়ক রাজ জানান, হনুমান জয়ন্তী নিয়ে তিনি এতটাই ব্যস্ত যে, ইচ্ছা থাকলেও ইডেনে আইপিএল ম্যাচে বিরাট কোহলিকে দেখতেও যেতে পারবেন না।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments