করোনা এয়ারবোর্ন সেটা আগেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয়ে একমত। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁচি-কাশি থেকে বের হওয়া বড় বড় জলকণার বদলে বাতাসের সূক্ষ্ম কণায় ভেসে ভাইরাল স্ট্রেন অনেকদূর অবধি ছড়াতে পারে। বাতাসে ভাসমান এই সূক্ষ্ম কণাগুলোকে বলে অ্যারোসল। যার মাধ্যমে ভাইরাস অন্তত ১০ মিটার দূরত্ব অবধি ভেসে যেতে পারে বলে দাবি গবেষকদের। কেন্দ্রের মুখ্য বিজ্ঞান উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবন বলেছেন, বড় জলকণা বা ড্রপলেটে ভেসে ২ মিটার অবধি যেতে পারে ভাইরাস। কিন্তু সূক্ষ্ম কণায় ভেসে কম করেও ১০ মিটার যেতে পারে। ছোট ছোট কণা বা অ্যারোসলে ভেসে দীর্ঘসময় বাতাসে টিকে থাকতেও পারে। এই অ্যারোসল কণাগুলো নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে ঢুকতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, ছোট জায়গায়, ভিড়ের মধ্যে বা বন্ধ ঘরে যদি পারস্পরিক দূরত্ব ৬ ফুটের কম থাকে তাহলে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। হাওয়ার গতিতে ভেসে ভাইরাস পার্টিকল সহজেই এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। তাই অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। কেন্দ্রের গাইডলাইনে কী কী বিষয়ে বোঝানো হয়েছে- অ্যারোসল বা ড্রপলেট ট্রান্সমিশন মানুষের নাক ও মুখ থেকে বেরনো জলকণায় ভাইরাল স্ট্রেন মিশে থাকতে পারে। এই জলকণা যখন বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন জলীয় বাষ্পে ভরাট হয়ে আরও বড় জলকণা তৈরি করে। একে এয়ার ড্রপলেট বলে। এই ড্রপলেটে ভেসে ভাইরাল স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়তে পারে। এখন এই এয়ার ড্রপলেট বা বাতাসে ভাসমান ভাইরাস জলকণা কতদূর অবধি ছড়াতে পারে বা বাতাসে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে সেটা নির্ভর করে নানা ফ্যাক্টরের উপরে। যেমন হাওয়ার গতি, হাওয়ার দিক, বাতাসের আর্দ্রতা, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, এই বড় জলকণাগুলো মাধ্যাকর্ষণের টানে বেশিক্ষণ বাতাসে টিকে থাকতে পারে না। অল্পসময়ের পরেই খসে যায়। তাই হাঁচি বা কাশির কারণে যে বড় ড্রপলেট তৈরি হয় তাতে ভেসেই ভাইরাস বহুদূরে ছড়িয়ে পড়বে এমনটা ভাবা ভুল। বরং ছোট কণা বা অ্যারোসল যার ব্যস ৫ মাইক্রনের কাছাকাছি, সেগুলিতে ভেসে ভাইরাস অনেকদূর অবধি যেতে পারে বলেই দাবি। তাই পরীক্ষা করে দেখা গেছে হাঁচি বা কাশির চেয়ে কথা বললে, গান গাইলে বা চিত্কার করলে ছোট ছোট জলকণা অনেক বেশি বের হয়। সেগুলোকে আশ্রয করে ভাইরাস পার্টিকল ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারফেস ট্রান্সমিশন কোনও পদার্থের ওপরে ভাইরাস পার্টিকল দীর্ঘসময় টিকে থাকতে পারে। সেই পদার্থ যদি মসৃণ হয় তাহলে ভাইরাসের জীবনীকাল বা ইনকিউবেশন পিরিয়ড অনেক বেড়ে যায়। দরজার হাতল, সিঁড়ি, সুইচ, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র, হাসপাতালের ফ্লোর, বেডের হাতল ইত্যাদি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। মাস্ক পরুন হাওয়ায় ভাসমান ভাইরাস কণা থেকে বাঁচতে ফেস-মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, ভিড়ের মধ্যে গেলে ফেস-শিল্ড বা ফেস-কভার থাকলে খুবই ভাল হয়। পারস্পরিক দূরত্ব অবশ্যই রাখতে হবে আর পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনে ডবল মাস্কিং করুন, অর্থাত্ দুটো করে মাস্ক পরুন। নীচের মাস্কটা হতে হবে সার্জিক্যাল মাস্ক, তার ওপররেটা কাপড়ের মাস্ক। আগে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে তার ওপরে কাপড়ের মাস্ক পরতে হবে। অথবা দুটো কাপড়ের মাস্কও পরা যেতে পারে। তিন-লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক হলে সেটা পরে তার ওপর হাল্কা কাপড়ের বা ফ্যাব্রিকের মাস্ক চাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে। দুটো মাস্ক একসঙ্গে পরলে তা চেপে বসবে নাক ও মুখের ওপরে। ভাইরাসের কণা চট করে ঢুকতে পারবে না। মাস্কের দুটো ফিল্টার লেয়ার পর পর থাকায়, ভাইরাসের জলকনা মাঝপথেই আটকে যাবে। খোলামেলা জায়গায় থাকলে বিপদ কম বদ্ধ ঘরের থেকে খোলামেলা জায়গায় থাকলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম হয়। কারণ বদ্ধ ঘরে ভাইরাসের ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে। একই ঘরে যদি বেশি মানুষজন থাকেন, তাহলে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার বাড়বে। কিন্তু যদি খোলামেলা জায়গায় সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। পরিবেশের তাজা অক্সিজেন পেয়ে ভাইরাস কণা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। শ্বাসজনিত সমস্যার ঝুঁকি অতটা থাকবে না। একই রকম বদ্ধ গাড়ির মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় বেশি থাকে। আর যদি গাড়িতে এসি চলে, তাহলে আরও দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোভিড টেস্টিং ও আইসোলেশন কনটেইনমেন্ট জ়োন চিহ্নিত এলাকাগুলিতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়াতে হবে। কোন এলাকায় সংক্রণ বাড়ছে তা দেখে সেখানে র্যাপিড টেস্ট শুরু করতে হবে। সে জন্য স্বাস্থ্য কর্মী, আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সংক্রমিতদের নিয়মিত চেক আপ করতে হবে।