রবি সকালে বঙ্গ রাজনীতিতে বড়সড় ঘটনা ঘটে গেল রাজ্য রাজনীতিতে। প্রায় ১০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে পুরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
BREAKING: আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
Read More-কলকাতার ব্যবসায়ী খুনের ঘটনার কিনারা লালবাজার শাখার, গ্রেপ্তার দুই বন্ধু
শ্যামাপ্রসাদবাবু ৩৪ বছর ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে ২০১১ সালে তিনি তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হিসাবেও নির্বাচিত হন ও রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি পরাস্ত হন। ততদিনে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতির অভিযোগ উঠে গিয়েছিল। তাঁর নাম জড়িয়েছিল সারদাকাণ্ডেও। একই সঙ্গে একটি বেসরকারি বাইক নির্মাণ সংস্থার সঙ্গেও প্রতারণা করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। আর এবার তো উঠেছে বিষ্ণুপুর পুরসভার দশ কোটি টাকারও বেশি টাকার আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ। এই সব বেনিয়ম করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্তের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন সকালে শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ।
তবে এদিনের ঘটনায় এখন সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির। কেননা একুশের ভোটের আগে শ্যামাপ্রসাদ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। এখনও সেখানেই আছেন। যদিও বিজেপি এবারে তাঁকে ভোটে টিকিটই দেয়নি। আসলে নিজেকে গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচাতেই শ্যামাপ্রসাদ দল বদল করেছিলেন। ভেবেছিলেন উনিশের ভোটে বাংলা থেকে ১৮টি আসন পাওয়া বিজেপিই বোধহয় এবার বাংলার ক্ষমতা দখল করে ফেলবে। তাই আগে থেকেই আগ বাড়িয়ে তিনি বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। যদিও এসব করে নিজের গ্রেফতারি ঠেকাতে পারলেন না তিনি। আর এখানেই মুখ পুড়েছে বিজেপির।
একুশের নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। সেই সময় তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা যাদের বিধানসভায় টিকিট দেওয়া হত না, তাদেরই নিজেদের দলে নিয়েছে বিজেপি। এদিন শ্যামাপ্রসাদের গ্রেফতারতে তৃণমূলের তোলা সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে গেল। আর তাতেই এখন মুখ পুড়ছে বিজেপির। এদিন শ্যামাপ্রসাদ গ্রেফতার হতেই তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘উনি পুরানো দিনের মানুষ। ৩৪ বছর ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় ৫৫টি প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলিতে কোনও কাজ হয়নি। এ নিয়ে তদন্ত করে মহকুমা শাসকের কাছে রিপোর্ট দেন চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন মহকুমা শাসক। দেখা যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমলে পুরসভায় প্রায় ১০ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপ হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশে এই আর্থিক তছরুপের অভিযোগ দায়ের করেছেন বিষ্ণুপুরের এসডিও কুতুবউদ্দিন খান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উনি সব থেকে বড় ভুল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্পগুলির টেন্ডার করেও কাজ না করে। অন্যায়ের শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে।’