Today Kolkata:- কোচবিহারে সভা করতে গিয়ে রাজবংশী যুবক প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)৷ এ দিন কোচবিহারের (Coochbihar) মাথাভাঙার কলেজ মাঠে সভা করেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ সেখানেই তিনি অভিযোগ করেন , গত ২৪ শে ডিসেম্বর কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা প্রেম কুমার বর্মনকে বাংলাদেশকে সীমান্তের কাছে গুলি করে মারে বিএসএফ (BSF)৷
এদিন মূলত বাংলা ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে কোচবিহারে সভা করেন অভিষেক৷ বক্তব্য রাখতে গিয়েই দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের গীতলদহ এলাকার ভারবাঁধা গ্রামের বাসিন্দা প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তোলেন অভিষেক৷ তৃণমূল সাংসদ জানান, কোচবিহারের বাসিন্দা হলেও বেঙ্গালুরুতে মিস্ত্রির কাজ করতেন বছর চব্বিশের ওই যুবক৷ গত ডিসেম্বর মাসে চার বছর পর বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি৷ ২৪ ডিসেম্বর সকালে বাড়ির কাছে পায়চারি করতে বেরোলে বিএসএফ তাঁকে নৃশংস ভাবে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)৷
অভিষেক জানিয়েছেন কলকাতায় ফিরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি৷ প্রেমের মৃত্যুর বিচার পেতে তিনি প্রয়োজনে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টেও যাবেন বলে জানান অভিষেক৷ পুলিশকেও যথাযথ পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেন তিনি৷ প্রেমের মা, বাবা এবং বড় দাদাকেও মঞ্চে ডেকে নেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)৷ জড়িয়ে ধরে নিহত যুবকের মাকে সান্ত্বনা দেন তিনি৷ নিজের রুমাল দিয়ে প্রেম কুমার বর্মনের মায়ের চোখের জলও মুছিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা৷ যে কোনও প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রেমের দাদাকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও জানান অভিষেক (Abhishek Banerjee)৷
Coochbihar বিএসএফের গুলিতে রাজবংশী যুবকের মৃত্যু, নিহত যুবকের মাকে নিজের রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন অভিষেক৷
প্রাইমারি টেট পরীক্ষায় প্রথম বর্ধমানের মেয়ে ইনা।
নিহত যুবকের শরীর থেকে ১৮০টি গুলির টুকরো উদ্ধার হয়েছে বলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে দাবি করেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)৷ নিহত প্রেম কুমার বর্মনের বাবা-মাকে মঞ্চে ডেকেও সান্ত্বনা দেন তৃণমূল সাংসদ৷ পাশাপাশি প্রেমের মৃত্যুর বিচার পাইয়ে দিতে এবং অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি দিতে যতদূর যাওয়া সম্ভব তিনি যাবেন বলেও জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক৷ তৃণমূল সাংসদ প্রশ্ন তোলেন, ‘ও কী কোনও জঙ্গি ছিল ? ওর অপরাধ কি ও রাজবংশী? ও কি সকাল সাতটার সময় মাঠে যুদ্ধ করতে গেছিল? নাকি ওর কাছ থেকে গরু, বোমা, বন্দুক, সোনাদানা উদ্ধার হয়েছিল ৷ যদিও ধরেও নিলাম ও পাচারকারী, তাহলে তো ওকে বেঁধে রাখা যেত , লাঠি দিয়ে মারতে পারত৷ পরে বিচার হত ৷ কিন্তু একটা তরতাজা ছেলেকে এ ভাবে কেন গুলি করে মারল? ‘
অভিষেক (Abhishek Banerjee) আরও জানান, নিহত প্রেম কুমার বর্মনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁর হাতে এসেছে৷ সেই রিপোর্ট উল্লেখ করে অভিষেক জানান, প্রেমের দু’ পায়ে অসংখ্য গুলি করা হয়৷ তৃণমূল নেতা বলেন, ‘জানেন ওর শরীর থেকে কটা গুলির টুকরো পাওয়া গিয়েছে? ১৮০টা ছররা গুলি মিলেছে প্রেমের শরীরে৷ আমি এক ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পায়ে গুলি লাগলেও কেন মৃত্যু হল প্রেমের? ওই বিশেষজ্ঞ আমায় জানান, পা এমন ভাবে জখম হয়েছিল যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই ওর মৃত্যু হয়েছে৷ শরীরে এক বিন্দু রক্ত ছিল না৷’
কোচবিহারের সাংসদ নীতিশ প্রামাণিক (Nitish Pramanik) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে উত্তরবঙ্গ সহ সিকিমে।
কোচবিহারের সাংসদ নীতিশ প্রামাণিক (Nitish Pramanik) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷ ফলে প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তাঁকেও নিশানা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক৷ এর পাশাপাশি এ দিন বাংলা ভাগ নিয়েও বিজেপি নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)৷ তৃণমূল (Trinamool Congress) সাংসদ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষরা একবার মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়ে বলুন তাঁরা বাংলা ভাগ চান।’ অভিষেক (Abhishek Banerjee) বলেন, ‘আমার উত্তরবঙ্গ কথাটাতেই আপত্তি আছে। আমার কাছে বাংলা একটাই, পশ্চিমবঙ্গ।’ অভিষেকের আশ্বাস দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) অন্যান্য জেলার মতোই নিয়ম করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও আসবেন তিনি৷
বিজেপিকে নিশানা করে অভিষেক (Abhishek Banerjee) বলেন, ‘যারা মুখে রাজবংশী প্রেমের কথা বলে তারা কাশ্মীরে জঙ্গি মারার বন্দুক দিয়ে প্রেম কুমার বর্মনকে গুলি করে মেরেছে। আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় দিলাম। তোমাদের অবস্থান জানাও। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, এর শেষ দেখে ছাড়ব। এই সন্তানহারা মা বাবাকে কথা দিয়ে যাচ্ছি , যারা এই কাজ করেছে , তার উপরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থাকলেও আমি ছাড়ব না।’ অভিষেক (Abhishek Banerjee) অভিযোগ করেন, প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর পর একদিনের জন্যও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বিজেপি-র কোনও নেতা৷ কোচবিহারে বরাবরই রাজবংশী ভোট বড় ফ্যাক্টর৷ কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গ এখনও বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি৷ সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ তার পর লোকসভা নির্বাচন৷ তার আগে এ দিন অভিষেকের রাজবংশী যুবক প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরব হওয়া এবং পরিবারের পাশে থাকার বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ৷
উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জনসভার মধ্যে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করছেন তা দেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক৷ এ ভাবে জনসভায় দাঁড়িয়ে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া যায় না৷ একটি মৃত্যুকে সামনে রেখে যে আবেগকে তিনি খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন, তাতে নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত বাহিনীর মনোবল ভাঙবে, রাজ্যেও অস্থিরতা তৈরি হবে৷ উনি সংসদে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারতেন৷ উত্তরবঙ্গের মানুষের বঞ্চনার অভিযোগ থেকে নজর ঘোরাতেই উনি এই প্রশ্ন তুললেন৷’