আট বছর পূর্বের পস্কো মামলাতে বিচার পেল নাবালিকা। কথায় বলে বিচার ব্যবস্থা বিলম্বিত হয় তবে বিচার নিশ্চিত করে। আর নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অবিচারের বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে আট বছর অপেক্ষার পর অবশেষে সোমবার হাওড়া আদালত থেকে বিচার পেলেন পস্কো ধারাতে মামলাকারী মহিলা।
সোমবার যাবতীয় তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে দুইজন সীমান্তরক্ষাকারী সেনা জোয়ানের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার ঘোষণা করে হাওড়া আদালতের বিচারপতি সৌরভ ভট্টাচার্য। এছাড়াও অপর আরেক অভিযুক্তকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার ঘোষণা করেন।
দুই ক্ষেত্রেই জরিমানার অর্থ না দিতে পারলে যথাক্রমে আরও ২ ও ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ওই দিন হাওড়া স্টেশন থেকে অমৃতসর মেলে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে পড়েন বছর ১৩ র এক যুবতী। সেনাবাহিনীর কামরা হওয়াতে বিশ্বাসের ভরসা করে ওই কামরাতে ওঠে পরেন ওই নাবালিকা। এরপর কামরাতে তাঁকে মদ্যপান করান কামরাতে থাকা দুই সীমান্তরক্ষী জওয়ান।
এরপর তার অচৈতণ্যতার সুযোগ নিয়ে ওই দুই জওয়ান ও তাঁদের আরেক সহযোগী মোট তিনজন তাঁকে কামরাতেই ছয় বার ধর্ষণ করে। ততক্ষনে হাওড়া থেকে মধুপুরা জিয়ারপিতে ওই নাবালিকার ট্রেনে ওঠার খবর পৌঁছে যায়। মধুপুরা স্টেশনের জিআরপি তিন থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। তার সঙ্গে একজন সেনা জওয়ানকে গ্রেফতার করে। বাকি দুজন পালিয়ে গেলেও তাঁদের কয়েক দিনের মধ্যেই আসাম রেজিমেন্ট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই নাবালিকার সমস্ত ডাক্তারি পরীক্ষা করে ধর্ষণের ঘটনার সমস্ত প্রমান পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন – স্ট্যান্ড রোডে একটি পরিত্যাক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার নরকঙ্কাল, ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য
এরপর তাঁকে হাওড়াতে নিয়ে আসা হয়। হাওড়া জিআরপির মাধ্যমে মামলা রুজু হলে সেই মামলা হাওড়া আদালতে ওঠে। হাওড়া হাসপাতালে নাবালিকার চিকিৎসাও করান হয়। এরপর ওই তিন অভিযুক্তকে টি আই প্যারেডে সনাক্তকরণের কাজ শেষ হয়। ১৮ জন সাক্ষ্মীর উপস্থিতিতে সোমবার আদালত ওই তিন অভিযুক্ত বালক রাম যাদব ও সন্তোষ কুমারকে পস্কো আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার ঘোষণা করে হাওড়া আদালতের বিচারপতি সৌরভ ভট্টাচার্য।
এছাড়াও অপর আরেক অভিযুক্ত মঞ্জরী ত্রিপাঠিকে পস্কো আইনের ৬/১৭ ধারা অনুযায়ী দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার ঘোষণা করেন। দুই ক্ষেত্রেই জরিমানার অর্থ না দিতে পারলে যথাক্রমে আরও ২ ও ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। গোটা আইনি প্রক্রিয়াতে অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করা হয় নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিলম্বিত বিচার পেলেও বিচার পেয়ে খুশি মামলাকারী।