Today Kolkata:- আধুনিক বিজ্ঞানের ট্রাইপড। আমরা যে যুগে বাস করছি তা যে শুধুই তথ্য প্রযুক্তির যুগ তা নয় তথ্য প্রাচুর্যের যুগও বটে। প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে আমরা মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন সংখ্যক ডেটা বা তথ্য উৎপাদন করছি আবার সাথে সাথেই গ্রহণও করছি। ঠিক এই সময় যখন আমরা সময়ের সাথে সাথে উৎপন্ন তথ্যের পরিমাণ মেগাডেটা, মাইক্রোডেটা, মিনিডেটা, ন্যানোডেটা হিসেবে চিহ্নিত করছি তখনই সময় কে আমরা মাইক্রো সেকেন্ড, মিলি সেকেন্ড ও ন্যানো সেকেন্ডের কাঁটায় বেঁধে রাখছি। মনুষ্য মস্তিষ্কের এই অভিনবত্ব সার্বজনীন ব্যবহারিক বিশ্বের দ্রুততার ইঙ্গিতবহ! আর এই সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের কর্ষনের কৃপায়।
এই তথ্য বা ডেটা আধুনিক বিজ্ঞানের মূখ্য পাথেয় হয়ে দাঁড়িয়েছে; তা সে ডেটা সায়েন্স বা তথ্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হোক কিংবা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যন্ত্রশিক্ষণ বা মেশিন লার্নিং-এর ক্ষেত্রে হোক। বিজ্ঞানের এই তিনটি শাখা আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেন ট্রাইপডের ভূমিকা পালন করছে।
একটি বৃহৎ সংখ্যক ডেটা বা তথ্য গ্রহণের পর তার আত্মীকরণ ও যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষ বিশ্লেষণ পূর্বক একটি বা একদল সিদ্ধান্তমূলক তথ্য উৎপাদন করে এই ডেটা সায়েন্স। অপরদিকে সমস্ত রকমের মনুষ্য প্রত্যয় ও পারদর্শিতার গুণ গুলো যন্ত্রের মধ্যে প্রয়োগ করে যন্ত্রটিকে মানুষের সমকক্ষ করে তোলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মেশিন লার্নিং হলো সেই মানুষের মতো বুদ্ধিদীপ্ত যন্ত্রটির কর্মকৌশলী। ডেটা সায়েন্স সবসময় সংগঠিত এবং অসংগঠিত উভয় প্রকার তথ্যের সাথেই কারবার করে, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সবসময় যুক্তি ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে; মেশিন লার্নিং পরিসংখ্যান ধাঁচার নির্দেশনা পালন করে। যেখানে তথ্য বিজ্ঞান একসাথে অনেকগুলো কাঁচা তথ্য পরিচালনাকে নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা যন্ত্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং যে কোন যন্ত্র বা যন্ত্র মন্ডলীর প্রযুক্তিগত ভাবে উচ্চ-ব্যক্তিত্বআরোপকরণ, পরিচয়, সাদৃশ্য, নির্দেশনা আদানপ্রদান, স্বতন্ত্র পদ্ধতি পরিচালনা, সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত এবং তদানুযায়ী লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে কর্ম গ্রহণের মানবীয় অভিব্যক্তি গুলো তৈরি করে। এর দৌলতেই শিল্প, বিল্ডিংস, ট্রাফিক, প্রসাশন, পাওয়ার গ্রিড, পরিবেশের সুরক্ষা, চাষবাস, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, ট্রান্সপোর্ট ও এমনকি পার্কিং পর্যন্ত সবকিছুই অত্যধিক স্মার্ট হয়ে গেছে।
তথ্য বিজ্ঞান বা ডেটা সায়েন্স ডেটা গ্রহণ করে, বাছাই করে, বিশ্লেষণ করে এবং যেখানে যেমন দরকার সেখানে সেই মতো তথ্যের প্রকাশ ঘটায়। এই ভাবেই এই বিজ্ঞান শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন-যোগান এবং আমদানি-রপ্তানির আগাম পূর্বাভাস, ব্যাঙ্কের সমস্ত ক্রেতাদের তথ্যের বিচার-বিমর্ষ, খুচরো ব্যবসায় মালের বিক্রির ধরন ও তার আগাম পরিস্থিতির খেয়াল রেখে চলেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় এপিডেমিওলজি ও টক্সিকোলজির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করে এই তথ্য বিজ্ঞান। স্মার্ট শহরের পরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে এবং পরিবেশে আবহাওয়ার আগাম সতর্ক বার্তা জানান দিতেও এই ডেটা সায়েন্স যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বোপরি একথা নিশ্চিত করে বলা যায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স বা তথ্য বিজ্ঞান ও মেশিন লার্নিং বা যন্ত্রশিক্ষণ আধুনিক বিজ্ঞান তথা আধুনিক সভ্যতার রূপরেখা পুরোটাই বদলে দিয়েছে। সত্যই বিজ্ঞানে বদলায় ভবিষ্যৎ, ছদ্ম বিজ্ঞান বা অন্ধবিশ্বাসে অধঃপতন!