সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর এখন ধর্মনিরপেক্ষ, দায়িত্ব বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। একদা কট্টর জামাত উলেমায়ে হিন্দ, এবং অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সংখ্যালঘুদের মধ্যে একজন বড় বিশ্বাসযোগ্য নেতা। তার বাবহার অত্যন্ত নম্র, প্রীতিপূর্ণ এবং মসৃণ। একবার তার অফিসে গিয়েছিলাম হিন্দুস্তান টাইমস-এর জন্য ইন্টারভিউ করতে। তখন তিনি আসামের আজমল সাহেবের এ আই ইউ ডি এফ-এর নেতা।
আবার জামাত উলেমায়ে হিন্দ-এর পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হলেও তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। তিনি এককভাবে নির্বাচনে লড়তে চান। অনেকটা নির্দলের মত। তাকে বলেছিলাম, দাদা আলাদা করে দাঁড়ান কিন্ত তৃণমূলের ‘প্রতিক চিহ্নটা’ নিয়ে দাঁড়ান। তখনও মহিলা নেত্রীকে পুরোপুরি মেনে নেবার মত মানসিকতা ছিল না অঃই কট্টর ইসলামি নেতার। এমনিতে কট্টর মুসলিম নেতা সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
তায় আবার উলেমায়ে হিন্দ-এর মত সর্ব ভারতীয় সংগঠনের নেতা। তিনি তিন তালাক তুলে দেবার বিরোধী ছিলেন। চারটে বিয়ের সমর্থক ছিলেন কিন্ত নিজে তা করেননি। তবে মানুষটি মিশুকে এবং সোজা কথাটা সোজাভাবে বলতে পছন্দ করেন। যেমন তিনি বাংলাদেশের ‘রাজাকার আলবদরদে’র মত সন্ত্রাসীদের ধর্মীয় নেতা মনে করে সেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন। বুঝেছিলাম তার মনে একটি সুপ্ত বাসনা আছে।
তা হল ‘মন্ত্রী’ হবার। প্রথম মমতার সরকারে মন্ত্রীত্ব পাননি। নেত্রীর নজরে আসেন দ্বিতীয়বার ২০১৬ তে। সেবার মাস এডুকেশন ও গ্রন্থাগার মন্ত্রীর পদ পেলেন। এখনও সেই পদে আছেন। তিনি বামফ্রন্ট মন্ত্রী নিমাই মালের চেয়ে এই দপ্তরের কাজ ভাল সামলেছেন এবং উন্নততর করেছেন। লাইব্রেরিকে একটি আন্দোলনের জায়গায় নিয়ে গেছেন।
তার যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। মুসলিম ভোটের মেরুকরণের যে আশা তিনি করেছিলেন তা পশ্চিমবঙ্গে ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ বরাবর ধর্ম নিরপেক্ষ মানসিকতার। বিশেষত বাঙালি মুসলিমরা ধর্মনিরপেক্ষ । তাদের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামী কম। অবাঙালী মুসলিম ধর্মে গোঁড়া। ফলে তিনি শেষপর্যন্ত তৃণমূলের জোড়াফুল চিহ্ন নিয়ে দাঁড়াতে রাজী হন । জিতেও যান। মঙ্গলকোট থেকে জেতেন।
পরে মন্তেশ্বর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন।তবে মঙ্গলকোটের তৃণমূলীরা তাকে মেনে নিতে পারেন নি। প্রায় দুদলের ঝগড়া হত। মারপিট হত। তিনি সরে আসেন মন্তেশ্বর-কেন্দ্রে। পরে মন্ত্রী হন। মারপিট কমে যায়। তিনি এখন তৃণমূলের নতুন মুখ হতে চলেছেন। দলনেত্রী তাকে মালদহ- উত্তর দিনাজপুর-মুর্শিদাবাদের মত কট্টর তিন মুসলিম প্রধান জেলার দায়িত্ব দিয়েছেন।