অতিরিক্ত ধূমপানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে কোভিড সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে। ধূমপায়ীদের ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার ৩১ মে বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস। এ বছরের থিম ‘কমিট টু কুইট’। সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের নেশা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিশ্বজুড়েই প্রচার শুরু হয়েছে। বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ তামাকে আসক্ত। প্রতি বছর মৃত্যু হয় ৮০ লক্ষের বেশি। তাছাড়া পরোক্ষ ধূমপানে মৃত্যু প্রায় ১০ লক্ষ। ধূমপান ফুসফুসের চরম ক্ষতি করে যা এই করোনা কালে আরও মারাত্মক হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই সতর্ক করেছিল, করোনাভাইরাস সংক্রমণের রিস্ক-ফ্যাক্টর হতে পারে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য। কারণ লাগাছাড়া ধূমপানে ফুসফুস দুর্বল হয়। আর সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন যেহেতু ফুসফুসের কোষেই প্রথম সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে, তাই শরীরের এই অঙ্গটি দুর্বল হওয়া মানেই ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ ও নিউরো-সায়েন্সের প্রধান ডক্টর প্রতিমা মূর্তি বলেছেন, ইদানীংকালে করোনা রোগীদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যাঁরা অতিরিক্ত ধূমপান করেন, তাঁদের সংক্রমণজনিত ফুসফুসের রোগ বেশি হয়েছে। পরোক্ষ ধূমপায়ীরাও নিরাপদে নন। সিগারেট-তামাকে কী কী থাকে- কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড-সহ অজস্র মেটাল। কী ধরনের রোগ হতে পারে- ফুসফুসে ক্যানসার, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), মুখগহ্বরে ক্যানসার, হৃত্পিণ্ডের নানা অসুখ। সিগারেটের ধোঁয়ায় ব্রেনের গ্রে ম্যাটার কমে যায়। পুরুষত্বহীনতা, পুরুষ বন্ধ্যত্বের কারণ। শ্বাসনালীর রোগ, স্ট্রোক, রক্তচাপ, হাড় দুর্বল। তামাক থেকে ক্যানসার: মুখ ও গলার ক্যানসার, চেস্ট, প্যানক্রিয়াস, রেক্টাল ক্যানসার। মহিলাদের ওরাল ক্যানসার, সার্ভাইকাল ক্যানসার।
ধূমপান কীভাবে কোভিড ঝুঁকি বাড়ায়?
ফুসফুসের নানা সংক্রামক রোগের সঙ্গে ধূমপানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। শ্বাসনালীর সংক্রমণ, শুকনো কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে নিউমোনিয়া, ধূমপানের ক্ষতিকর দিক অনেক। তাই দেখা গেছে সিগারেটে আসক্তি যাঁদের বেশি, তাঁরাই অ্যাকিউট রেসপিরেটারি ডিসট্রেস সিনড্রোমে বেশি আক্রান্ত হন। সিগারেটের ধোঁয়া শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছয়। ক্ষতি হয় শ্বাসনালীরও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শ্বাসনালী বাহিত হয়েই ভাইরাস পৌঁছয় ফুসফুসে। এপিথেলিয়াল কোষের রিসেপটর প্রোটিনের সাহায্যে কোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করে। এখন ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি আগে থেকেই দুর্বল হয়, তাহলে ভাইরাল স্ট্রেনের কোষে ঢুকে পড়ার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজে হয়। তার উপর আগে থেকেই শ্বাসনালীর সংক্রমণ থাকলে, সেখানকার কোষের মাধ্যমে ভাইরাসের ফুসফুসে চলে আসার রাস্তাও সহজ হয়ে যায়। লাগাতার ধূমপানে ফুসফুসের রোগ ঠেকানোর ক্ষমতা কমে যায়। ফুসফুসের মধ্যে যে সিলিয়েটেড কোষ থাকে সেগুলো দুর্বল হতে থাকে। এই সিলিয়েটেড কোষে ছোট ছোট চুলের মতো অংশ থাকে যা বাইরে থেকে শরীরে ঢোকা রোগজীবাণু বা ধুলোবালি ছেঁকে বাইরে বার করে দিতে পারে। অধিক ধূমপানে এই কোষের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ধূমপায়ীদের মধ্যে যে কোনও ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণ নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টিবি ইত্যাদি বেশি হতে দেখা যায়। এই একই কারণে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও তাঁদের বেশি।