স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ছাই মজুতের লোহার ট্যাঙ্ক ভেঙে বড় দুর্ঘটনা ঘটল রানিগঞ্জে। ছাইয়ের ট্যাঙ্কের তলায় চাপা পড়েছেন চার শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলেই আশঙ্কা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও এক জন। শনিবার ভোররাতের ওই ঘটনায় কারখানার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিল্পতালুকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, রানিগঞ্জের মঙ্গলপুরে একটি বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা রয়েছে। ওই কারখানায় যে ছাই বা ফ্ল্যাই অ্যাশ তৈরি হয়, সেগুলি একটি লোহার চৌবাচ্চা তথা ট্যাঙ্কে জমা হত। এদিন ভোররাতে হঠাৎ করেই সেই বিশালাকার ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ে। ঘটনার সময় চার শ্রমিক ওই ট্যাঙ্কের নীচে কাজ করছিলেন। ছাইয়ের লোহার ট্যাঙ্কের নীচে তাঁরা একেবারে চাপা পড়ে যান। একজনকে কোনওক্রমে জীবিতঅবস্থায় উদ্ধার করা গেলেও, বাকি তিনজনকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা জিতেন বাউরি বলেন, ‘এদিন ভোররাত দু’টো ১৩ মিনিট নাগাদ ছাইয়ের ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ার খবর পাই। তারপর আমরা দমকলে খবর দিই। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপর ভোর চারটে থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হয়।’
জানা গিয়েছে, ট্যাঙ্কের নীচে চাপা পড়া শ্রমিকদের নাম শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য (৩৬), দিলীপ গোপ (৪৩), তন্ময় ঘোষ (৪২) এবং শিবনাথ রাম। এঁদের মধ্যে J.K নগরের বাসিন্দা শিবনাথ রামকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ গোপ এবং বাঁকুড়ার বাসিন্দা শিবশঙ্কর ও তন্ময়কে উদ্ধার করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় উদ্ধারকারী দলের কর্মীদের। দীর্ঘক্ষণ ছাই ও লোহার ট্যাঙ্কের ধ্বংসাবশেষের নীচে পড়ে থাকায় তাঁদের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন ওই কারখানার শ্রমিক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ছাইয়ের ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ে এদিনের দুর্ঘটনার জন্য স্পঞ্জ আয়রন কারখানার কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন কারখানার শ্রমিকেরা। দয়াময় গোপ নামে কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘ছাইয়ের ট্যাঙ্কটি হেলে পড়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে সেটির সংস্কার হয় না। সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছিলাম। কর্তৃপক্ষ দেখছি, দেখব বলত। গতকালও ম্যানেজারকে বলেছি। তারপর রাতেই এই দুর্ঘটনা।’
একইভাবে আরেক শ্রমিক কৈলাশ পতি খাঁ বলেন, ‘লোহার ট্যাঙ্কটির পিলারে জল লেগে মাটি ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, কারখানার মালিক গুরুত্ব দেননি।’
এদিন দয়াময়ের সংযোজন, ‘মৃত শ্রমিকদের পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি ও ২০ লক্ষ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি রেখেছি।’ কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও আশ্বাস বা দুর্ঘটনা সম্পর্কে কোনও বিবৃতি মেলেনি।