Today Kolkata:- দুর্ভাগ্যজনক বাংলাভাষা । একটা বড়ো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। হয়তো আমরা নিজেরাই ভালো করে জানি না কি হতে চলেছে আমাদের সঙ্গে আগামীতে। আমরা বাঙালি! বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃদুগ্ধ আর মাতৃভাষা এই দুয়ের স্বাদপূরণের পরিপূরক বাঙালি।
অথচ আজ একটু চোখ মেলে তাকালে এই বাংলাতেই বাংলা ভাষাকে কুণ্ঠারোধ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা না পারছি ঠিক মতো বাংলা বলতে আর না পারছি ঠিক মতো ইংরেজি গুছিয়ে বলতে। অথচ ২১ ফেব্রুয়ারি কিংবা ১৯ মে এলে আমরা ব্যস্ত হয়ে পরি বাংলা নিয়ে। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষার প্রচারে আমরা সরব হয়ে পড়ি। শুধুমাত্র এই বিশেষ দিন দুটির দিনই আমরা ঝালে-ঝোলে-স্বাদে বাঙালি; আর বাদ বাকি দিনগুলো…..
বাংলা কৈ! ইংরাজি আর বাংলা মিলেমিশে আমাদের কথা বলা আজ বাংরেজি ভাষায়। হ্যাঁ এটাই মেনে নিতে হবে। এই নতুন বাংরেজি ভাষার উপদ্রব আজকাল সর্বত্র। হাসলে চলবে না। যতই স্লোগান উঠান, মিছিলের পায়ে পায়ে ফেস্টুন লাগিয়ে চলুন দেখবেন পালিত দিন টুকুতেই আমাদের যত বাংলা ভাষা নিয়ে আদিখ্যেতা। দোষটা কাকে দেবো! আমরা সবাই তো এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে নিয়ে দৌড়াচ্ছি। সেখানে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছি।
আরও পড়ুন – ফের বিজেপিতে ভাঙন পূর্ব মেদিনীপুরে
ভালো কথা, বিদ্যালয়ে ফোর্থ সাবজেক্ট বা অ্যাডিশনাল বিষয়টি তো বাংলা রাখা যেতে পারে তা নয়কি! তাও আবার দেখছি তারা বলছেন, না ইংরেজি পাশাপাশি আমি আমার সোনাকে হিন্দিটা অ্যাডিশনাল (ঐচ্ছিক) বিষয় হিসাবে রেখেছি। ওটাই একটু ভালো করে শেখা দরকার।
তাই না! আর বাংলা! সে তো আমরা ঘরেতেই বলাবলি করি। আর এমনকি ভাষা। বাংলা ভাষার প্রতি ব্যাঙ্গো উপমা তুলে রাখা গেল না বুকের খাঁচাতে। তাই হোক কলরব! কলমে না হয় একটু!! বড়ই দুর্ভাগ্য হতাশা লাগে রবিঠাকুর, বিদ্যাসাগর, নজরুল, বিভূতিভূষণ নামগুলো যখন চোখের ফ্রেমেতে টাঙানো থাকে।
‘আত্মঘাতী বাঙালি’ তবে কি সত্যিই মরণের দিকে ছুটছে। ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ কথাটা ঠোঁটের দোড়গোড়ায় অবশ্যই এসে দাঁড়ায়। কুণ্ঠারোধ হয় না বলতে নিজেদের।
বড্ড লজ্জা লাগে আমাদের বিপদ আমরাই ডেকে আনছি ধীরে ধীরে। ভয়ঙ্কর দিনের সূচনাংশে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। অথচ এরজন্য বিন্দুমাত্র কারোর হেলদোল নেই। বাংলা ভাষার দুর্ভাগ্যের দিন ক্রমেই আসন্ন। চরম অবনতি হচ্ছে আমাদের বলতে দ্বিধা নেই।
আমার মনে হয় বাঙালিরা আজকাল স্মার্ট থেকে অধিকতর এতোটাই স্মার্টনেশে দাঁড়িয়েছে যে বাংলা ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখ ও ভয়ের বিষয়।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেখা যায়, সমস্ত কর্মসংস্থানগুলি হিন্দি আর ইংরেজিতে পিঠোপিঠি! তাদের কাছে বাংলা ভাষা নাকি মূর্খতা আর লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা আমাদের সত্যিই লজ্জায় ফেলে! এটা হয়তো বাঙালি মনুষ্যত্ব ভুলেই যাচ্ছে দিনকে দিন। আসলে গোলামি করাটা আমাদের কেমন যেন পেয়ে বসেছে সেই অতীত থেকেই! একথা তাই বলতে একটুও বাঁধে না যে, বাঙালি আত্মঘাতী ও আত্মধ্বংসী শ্রেষ্ঠ জাতি!
আওয়াজ তোলো! আওয়াজ তোলো! আওয়াজ আর তোলা হচ্ছে কৈ! হ্যাঁ, তবে বাংলা ভাষার বিশেষ দিনগুলোতেই “আমরা বাংলা চাই” বলে বাংলা ভাষার ফেস্টুন নিয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ি। আজ নিরদ সি চৌধুরীর কথাটি সত্যি মনে পড়ছে— ”আত্মঘাতী বাঙালি…”! দুর্ভাগ্যজনক বাংলাভাষা