Today Kolkata:- নির্মাণে, বিষয় ভাবনায় টলিউড ছাপ রাখছে, দক্ষিণেকে অনুকরণ না করেই, পাবলো। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ই মাথায় সিনেমা বানানোর পোকাটা নড়াচড়া করছিল। তাই পরিবারের চাকরির চাপ উপেক্ষা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ মোটেই সহজ ছিল না। প্রাথমে কয়েকটা মিউজিক ভিডিও বানানোর সুযোগ আসে। পাবলোর কথায়, ” তাতে পরিশ্রম ছিল কিন্তু পারিশ্রমিক তেমন ছিল না”। ততোদিনে বোঝা হয়ে গেছে ছবি তৈরির জন্য কোন প্রোযোজক পাওয়া যাবে না। এরই মধ্যে ছবি নির্মানের প্রথাগত প্রশিক্ষণ সে নিয়ে নেয় । শেষমেষ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি তৈরির ভাবনা। স্বাধীন সিনেমা আন্দোলনের শরীক হয়ে ওঠেন পাবলো।
সঙ্গে বহুদিনের সাথী মৌ। মৌয়ের সাহায্যে তৈরি হল প্রযোজনা সংস্থা ‘ইফিনিটিভ সিনে মিডিয়া’। বাবার টাকায় ক্যামেরা কিনে তৈরি হল ” ভাঙা দেশলাই”। ২০১৮ ডিসেম্বর কলকাতার ইন্দিরা সিনেমা হলে রিলিজ করল ছবিটি। পরিবারে এল খুশির জোয়ার। স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয়ে গেল ছবিটি। অন লাইনে এক লক্ষ ছাড়াল দর্শক। এই সুখানুভুতিকে সঙ্গে নিয়েই তৈরি হোল পরের ছবি ” যেথায় পথ বেঁকেছে “। ২০২০ জানুয়ারীতে নিউ টাউনের নজরুল তীর্থে রিলিজ করল ছবিটি। তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর পাবলোর সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনার প্রতিঘাতে ভাবনা এক অন্য দিকে মোড় নেয়। নতুন ছবি তৈরির পেক্ষাপট এবার নকশাল আন্দোলন।
আন্দোলনের কারণ ও তার সমাজ বাস্তবতাকে ধরার চেষ্টা। জুটে যায় বেশ কিছু ছেলেমেয়ে। স্বাধীন ভাবেই তৈরি হোল ‘একাত্তর ‘। স্বাধীনতা উত্তর ভারতের আদর্শ আর আত্মত্যাগের মহাকাব্যকে ছোঁয়ার এক সাহসী প্রয়াস। ইতিমধ্যে নেমে এল লকডাউন। লকডাউনের মধ্যেই রেকর্ড হোল পটার গান এবং বাদশা মৈত্রের কবিতা। লকডাউন পর্ব জুড়ে চলল ছবির এডিট। লকডাউন উঠতেই ডাবিং শেষ করে তৈরি হোল ‘ একাত্তর ‘।
২০২১ এর ৭মে ইউটিউবে মুক্তি পেল একাত্তর। দেশ বিদেশের বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখানোও হোল । বিদেশী চলচ্চিত্র উৎসবগুলির মধ্যে “লিফ্ট অফ গ্লোবাল” এর প্রথম ছবি নির্মাতাদের বিভাগে মনোনীত হয় ছবিটি। এছাড়া আই ইনসিগনিয়া ফিল্ম ফেস্টিভাল, ইন্ডিয়া সিনে ফিল্ম ফেস্টিভাল, এশিয়া রে ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রতিযোগিতায় স্থান পায় একাত্তর। এসবের মধ্যেই ২০২২ মার্চে মুক্তি পায় পাবলোর ” ম্যাগনাম ওপাস”। এটি ছিল পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ছবি। মুক্তি পায় কলকাতা ও জেলায়। এই পরীক্ষা নীরিক্ষার সাহসই পাবলোর শক্তি। এর পরই রক্তকরবীর অন্তরবস্তুকে সমকালীন ভারতের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরার প্রয়াস । তৈরি হল “রেড অর্কিড”। এই ছবি বর্তমান সময়কে ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিয়েছে। গল্পের অমসৃণ গতি ছবিটিকে ডকু ফিচারের আদল দিয়েছে।
আরও পড়ুন – মুখ্যমন্ত্রীর রাতের ঘুম কেড়ে নেব! হুঁশিয়ারি কৌস্তভের
তবুও ভীষণ সমসাময়িক ও বলিষ্ঠতার জন্য পাবলোকে কুর্নিশ করতে হয়। বাদশা মৈত্র প্রত্যাশা পূরণ করেছেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অভিনয়ে। মৌ এবং অন্যান্যদের অভিনয় যথাযত। শুধু একটু আগে থামলেই পাওয়া যেত একটা টান টান পরিসমাপ্তি। তবুও বর্তমান প্রজন্মের পরিচালকদের অনেকেই সমকালীন ভারতের সংকটকে এ ভাবে উন্মোচিত করার সাহস দেখাতে পারেনি। পাবলো ও তাঁর টিম সেই ব্যাতিক্রমী কাজটাই করেছে। টলিউড ছাপ